বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

পঞ্চবটীতে পঞ্চ সমস্যায় নিত্য যানজট

প্রকাশিত: ২২ মে ২০১৭   আপডেট: ২২ মে ২০১৭

শাহরিয়াজ শুভ্র (যুগের চিন্তা ২৪ ডটকম) : পাঁচ বটের সমাহার পঞ্চবটীতে পাঁচটি বটগাছ না থাকলেও পাঁচটি প্রধান সমস্যার কারণে প্রতিদিন তীব্র যানজটের স্বীকারে পড়তে হয় এ পথ দিয়ে চলাচলকারীদের। এতে অতিষ্ট হয়ে পড়ছে এ এলাকার মানুষ। প্রতিদিন প্রায় ৫০ হাজার মানুষের চলাচল এ সড়ক দিয়ে। এই মানুষগুলোর কাছে যথারীতি এক আতঙ্কের নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে এ সড়কটি। ঢাকা মুন্সিগঞ্জ, এবং ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের পুরোনো সড়ক নামে পরিচিত এই জায়গায় প্রতিদিন যানজটে মানুষের ঘন্টার পরে ঘন্টা সময় নষ্ট হচ্ছে। এতে বিপাকে পড়ে এই সড়ক ব্যবহারকারীরা। এমনকি ট্রাফিক পুলিশও এ ক্ষেত্রে অসহায়। তাদের মুখে আক্ষেপ আর হতাশা ছাড়া নারায়ণগঞ্জের মানুষ তেমন কোনো আশার কথা শুনতে পারছে না। সরু রাস্তা, যমুনা ও মেঘনা ডিপোর গাড়ি, মিটার স্কেল, পঞ্চবটীর মোড়ে অবৈধ অটো ও বেবি স্ট্যান্ড এবং অবৈধ পার্কিং এই পাঁচ সমস্যায় এ সড়কে যাতায়াতকারী মানুষের সময় নষ্ট করার সময় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার ফলে অনেকেই এই রাস্তা ব্যবহার না করে বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করছেন। এই রাস্তা দিয়ে ফতুল্লা থেকে চাষাড়া যেতে অনেক সময় ঘন্টা পার হয়ে যায়। এবং ট্রাফিক পুলিশও অসহায় হয়ে যায়। বিশেষ করে গার্মেন্টস শুরু ও ছুটির সময়, এবং দুপুর ১২ টার দিকে এ যানজটের মাত্রা তীব্র হয়ে যায়। ঢাকা নারায়ণগঞ্জের এই সড়কটি প্রচুর সরু। পাশাপাশি তিনটি গাড়ি চলাচল করতে পারে না। যার ফলে সব গাড়িকেই ধীর গতিতে চলতে হয়। এবং এই সড়কে রিক্সা ও অটোর রাজত্ব। কয়েকশ অটো ও রিক্সা চলাচল এবং যত্রতত্র পার্কিংয়ের জন্য  যানজট এখানকার নিত্য সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার দরুণ এই সড়ক দিয়ে চলাচলকারী যানবাহন ও মানুষ উভয়ই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে। প্রায়ই প্রতিদিনই সড়ক দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটে এ সড়কে। এই সড়কের অন্যতম সমস্যা যমুনা ও মেঘনা ডিপোর গাড়ি। শতাধিক গাড়ি রাস্তার পাশে এলোমেলোভাবে রেখে রাখে। এবং তাদের রাজত্বে থাকে এই সড়কটি। তারা কাউকে পরোয়া করে না। নিজেদের খাম খেয়ালিভাবে রাস্তা বন্ধ করে গাড়ি রাখায় এ অঞ্চলের মানুষকে নাকাল হতে হয়। তা ছাড়া প্রতি রবিবার ও বৃহসপতিবার যমুনার গাড়ি ছাড়ায় এ দিন কষ্টের সীমা থাকে না। এত সমস্যার মধ্যেও যমুনা ও মেঘনার কর্তৃপক্ষের যানজট নিরসনে নেই কোন পদক্ষেপ। মরার উপর খাড়া ঘা  হিসেবে আবির্ভুত হয়েছে এবি মিটার স্কেল। এই এলাকায় ঠিক যমুনা ডিপোর অপরপাশে এই মিটার স্কেলকে ঘা হিসেবে দেখছে এই এলাকার মানুষ। এই মিটার স্কেলে দৈনিক লোড করা ট্রাক তাদের ওজন মাপে। এবং প্রায়ই মূল সড়ক অবরোধ করে তারা তাদের গাড়ি রাখে। তাতে যানজটের সৃষ্টি হয়। পঞ্চবটীর মোড়ের দুইপাশে সারিবদ্ধভাবে রাখা আছে বেবি ও অটো। এসব বেবিগুলো চাষাড়া থেকে পঞ্চবটী থেকে আসা যাওয়া করে। এবং অটোগুলো পঞ্চবটী থেকে মুক্তারপুর আসা যাওয়া করে। পুলিশকে মাসে ১০০ টাকা ও এলাকার প্রভাবশালী নেতাদের দৈনিক ৫০-৬০ টাকা করে দিতে হয়। আর এ জন্য অনেক ক্ষমতা প্রদর্শন করেই তারা তাদের গাড়িগুলো এখানে রাখে। এতে দুই লেনের মূল সড়কের অনেকাংশে দখল হয়ে যায়। যার দরুণ এই সড়কে যানজট তীব্র থেকে তীব্রতর হয়। তাছাড়াও পঞ্চবটী থেকে নারায়ণগঞ্জে আসা যাওয়ার জন্য নেই কোন নির্দিষ্ট যানবাহন। তাই সরকার কর্তৃক অবৈধ ঘোষিত পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক বেবি এই জায়গার জনগণের একমাত্র ভরসা। কিন্তু এই যানবাহনগুলো যেমন ক্ষতি করছে পরিবেশের ঠিক তেমনি যানজটের নৈপথ্যে কাজ করছে। এ ছাড়াও ঢাকা নারায়ণগঞ্জের পুরোনো এই সড়কে যত্রতত্র পার্কিংয়ের কারণে যানজটে নাকাল হতে হয়। মূল সড়কের দুই পাশে বোরাক বাসের অবৈধ পার্কিং, ট্রাক, অটো, সিএনজি সহ বিভিন্ন যানবাহন রাখার ফলে এ যানজট এখন এ এলাকার মানুষের নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে দাড়িয়েছে। এ ব্যাপারে এই সড়ক দিয়ে নিত্য চলাচলকারী কয়েকজন জানায়, এই সড়কে এত পরিমাণ যানজট তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ফতুল্লা থেকে নারায়ণগঞ্জ যেতে সময় লাগে ঘন্টাখানেক। আর ট্রেনে ফতুল্লা থেকে ঢাকা যেতে সময় লাগে ৩০ মিনিট। তবুও আমাদের এই সড়কটি প্রতিদিন ব্যবহার করতে হয়। তপু নামে এক ব্যক্তি জানায়, আমার খরচ বেশি হওয়া সত্ত্বেও আমি ঢাকা নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড ব্যবহার করি। তবুও এই যানজট সহ্য করতে পারি না। এই অবস্থা থেকে নিরসনের কোন উপায়ও প্রশাসনের হাতে নেই। তারা সবাই নেতাদের পা চাটতে ব্যস্ত। এ ব্যাপারে সহকারী পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) আব্দুর রশিদ বলেন, পিপিএম যানজটের ব্যাপারে অসহায়ভাবে বলেন, ঢাকা মুন্সিগঞ্জের রাস্তায় অপরিকল্পিতভাবে বিসিক শিল্প নগরী গড়ে উঠেছে। এই রাস্তাটাও অনেক সরু। যখন গার্মেন্টস ছুটি হয় তখন প্রায় অর্ধ লক্ষ লোক একসাথে রাস্তায় নামে। তখন কোন যানবাহন একটু চলার জায়গা থাকে না। তখন যানজটের সৃষ্টি হয়। আর অপরিকল্পিতভাবে অটো বেবিকে রাস্তায় নামানোর ফলে তাদের কিছু বলা যাচ্ছে না। এখন এর পিছনে অনেক বড় শক্তি কাজ করে। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। তাছাড়া যমুনা ও মেঘনা ডিপোর গাড়িগুলো গভীর রাতে রাস্তা বন্ধ করে রাখে। সকালের দিকে তারা একের পর এক গাড়িগুলো সড়িয়ে নিতে থাকে। এমন অবস্থায় আমরা আছি। এখন আমাদের কিছু করার নাই। আমরা যথাসম্ভব চেষ্টা করছি জোড়া তালি দিয়ে তা নিয়ন্ত্রনে রাখার জন্য।
এই বিভাগের আরো খবর