বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

নারায়ণগঞ্জে ঐক্য হতে পারছেনা বিএনপি

প্রকাশিত: ১৩ মে ২০১৭   আপডেট: ১৩ মে ২০১৭

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪ ডটকম) : একাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি দলগুছাতে চেষ্টা করেও পিছিয়ে পড়ছে। দলের শীর্ষ নেতাদের অনৈক্য, বিভিন্ন নেতার অনুসারি হয়ে দলে গ্রুপিং এর কারনে এই অনৈক্য আরো জোরদার হয়েছে। বিশেষ করে সম্প্রতি দুটি প্রতিনিধি সম্মেলনে এসব অনৈক্য দৃশ্যমান হয়ে উঠায় বিপাকে পড়েছেন তৃনমূলের নেতা কর্মীরা। বিভিন্ন কমিটি নিয়ে বিরোধ, শীর্ষ নেতাদের অনুসারীদের দলে প্রভাবের বিস্তার, দলের চেয়ে ব্যবসা ও নিজের চেয়ার রক্ষাকে প্রাধান্য দেয়ায় অবমূল্যায়িত হচ্ছে ত্যাগী নেতাকর্মীরা। ফলে দল গুছাতে শুরু করলেও দলে ঐক্যের চেয়ে বিরোধই প্রাধান্য পাচ্ছে। এদিকে এ অনৈক্যকে ঘিরে তৃনমূল নেতাকর্মীরা হতাশায় ভূগলেও এন নিরসনে শীর্ষ নেতাদের কোন উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। এক অপরের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে দায়িত্বের বোঝা। কেউ অগ্রজ ভূমিকায় নেই। এই অনৈক্যকে যদি দ্রুত ঐক্যতে রুপান্তরিত করা না যায়, তবে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির ফল বেশি ভাল হবে না বলেই মনে করছে নারায়ণগঞ্জবাসী। ২০০৯ এর নির্বাচনে বিএনপির গো-হারা এবং ২০১৩ সালে বিএনপি নির্বাচন বয়কট ও প্রতিহত করার চেষ্টা বাঞ্চাল হওয়ার পর সারা দেশেই অনেকটা ঝিমিয়ে পড়ে বিএনপির কার্যক্রম। বিএনপি চেয়ারপার্সন কয়েকবার জোরদার আন্দলন গড়ে তোলার আহ্বান করলেও নারায়ণগঞ্জ বিএনপির এনিয়ে কোন কার্যক্রম তেমন পরিলক্ষিত হয়নি। আন্দোলনের নামে ফটোশেসনে কেন্দ্রীয় দল আর মিডিয়ার সামনে আসা ছাড়া তাদের কার্যক্রম তেমন দেখা যায়নি। নারায়ণগঞ্জের বিএনপি কার্যালয়ও গত কয়েক বছরে প্রায়ই বন্ধ থাকতো। এতে দলের নেতা-কর্মীরা যেমন হয়েছে আশাহত ঠিক তেমনি দলের মধ্যে ঢুকে পড়েছে অনেক সুঁচের মতো নেতারা। যারা সুযোগ পেলেই দলের মধ্যে থেকে ভয়ংকর সাপ হয়ে বেড়িয়ে আসবে। বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির কোন কার্যালয়ই নেই। মফস্বলে নেতাদের সুবিধা মতো অঞ্চল ভিত্তিক জেলা কার্যালয় বানানো হয়েছে। ফলে নারায়ণগঞ্জের প্রান কেন্দ্রে বিএনপির কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। শুধুমাত্র মহানগর বিএনপির কিছুটা তৎপরতা দেখা গেলেও সেটা অনেকটাই ফটোসেশনের মতো কার্যক্রম বলে দাবি করেছেন অন্যান্য নেতাকর্মীরা। এরপরও সবদিক বিবেচনা করেই নারায়ণগঞ্জ বিএনপিকে নতুন করে সাজানোর উদ্যেগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় বিএনপি। কিন্তুবিএনপির একাংশের কর্মীদের অভিযোগ কোনো কমিটি যাতে পূর্ণাঙ্গ রুপ না নিতে পারে তার জন্য দৌড় ঝাপ করছে কয়েক শীর্ষ নেতা। এদিকে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির কর্মী সভায় সাবেক এমপি গিয়াসউদ্দিন উপস্থিত থাকলেও ছিল না এড. তৈমুর আলম খন্দকার ও দিপুসহ অনেক নেতৃবৃন্দরা। বিএনপিতে অনৈক্যের কারনে এ কর্মী সভায় গিয়াসউদ্দীন পন্থী নেতা কর্মীরা শারীরীক ভাবে লাঞ্চনা করে আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাসকে। সম্মেলনের পর থেকেই এড. তৈমুর আলম খন্দকার, গিয়াস উদ্দীন, শাহ আলম, কাজী মনির, এ.টি.এম কামাল সকলেই একে অপরকে দোষারোপ দিচ্ছে। তবে এখনো লোক চক্ষুর আড়ালে রয়েছে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির কৌশলী নেতা মোহাম্মদ আলী। অপরদিকে, নারায়ণগঞ্জ বিএনপির প্রাণ বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এড. তৈমুর আলম খন্দকারকে মাইনাস করার চেষ্টায় রয়েছে বিএনপির কয়েকজন নেতা। এমনকি জেলা বিএনপির সম্মেলনে তাকে রাখা হয়নি। আর এর জন্য অনেকটা আবেগ তাড়িত হয়েই এড. তৈমুর আলম খন্দকার বলেছিলেন, আমাকে বাদ দিয়ে যদি দলে শান্তি ফিরে আসে,  দল ঐক্যবদ্ধ হয় তাতেই আমি খুশি।’ অন্যদিকে বিএনপির নেতা গিয়াস উদ্দীন ও শাহ আলমের মধ্যে দ্বন্দটা এতদিন পরে ফুটে উঠেছে। ২০০৯ এর নির্বাচনের আগে এই ব্যবসায়ী নেতার আগমন হয় বিএনপিতে। তিনি নিজের কিছু নেতাকর্মীদের মধ্যে সু-সম্পর্ক রাখলেও এর বাইরে তেমন কোন প্রভাব বিস্তার করতে পারে নি। বিভিন্ন ঘাটের পানি খেয়ে বিএনপির আশ্রয়ে আসা নেতা গিয়াসউদ্দীন। তবে তিনিও বিএনপির জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তিনিও এই কর্মী সভায় এসে হতাশ হয়েছেন। তার অভিব্যক্তি ফুটে উঠেছে তার বিভিন্ন সময়ের বক্তব্যে। এত কিছুর মধ্যেও বিএনপি বর্তমান সভাপতি কাজী মনির চেষ্টা করছে সকলের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে। নেতা কর্মীদের মধ্যে তিনি গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করতে বিভিন্ন কর্মসূচী অংশ গ্রহন করছেন। বন্দরে মহানগর বিএনপির সম্মেলনে কাজি মনিরের উপস্থিতিতেই এর অনন্য নজির। এরপরও তিনি তিনি কতটুকু পারবে দলের মধ্যে ভ্রতৃত্ব ফিরিয়ে আনতে এমন প্রশ্ন ঘুরছে বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের কর্মীদের মধ্যে। অপরদিকে জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ নিজের অবস্থানকে ধরে রাখতে সকলের সাথে সমান তালে তাল মিলিয়ে চলছেন বলে অনেক নেতাকর্মীরা অভিযোগ করছেন। এতে দল গুছাতে গিয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে নিজের পদপদবী টিকিয়ে রাখার বিষয়টি নিয়ে তিনি পিছিয়ে পড়ছেন বলে নেতাকর্মীরা দাবী করছেন। ফলে, আগামী নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি আওয়ামীলীগের সাথে ভোট শক্তিকে মোকাবিলায় কতটুকু সামর্থ হবে এ প্রশ্নটাই ঘুরছে সকল বিএনপিপন্থী মানুষের মনে। এ বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এ্যাড. তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, এই অনৈক্য সৃষ্টি করেছে কেন্দ্র। কেন্দ্রকেই এই সমস্যা নিরসন করতে হবে। বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, নারায়ণগঞ্জ ৪ আসনের সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দীন বলেন, আমি চেষ্টা করছি পুরো জেলার মধ্যে একটা ঐক্য তৈরি করার জন্য। পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়ার কারণে অনেকেই বাদ আছে। আর যারা কমিটিতে এসেছে তারা এখনো ওই রকম আস্থা অর্জন করতে পারে নাই। যার জন্য এই সমস্যা। আমি চেষ্টা করছি এই সমস্যা সমাধান করতে। জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ বলেন, যখন কোন কাউন্সিল হয় এবং পদ পদবী বিন্যাস হয়, তখনি নেতাদের মধ্যে পদ পাওয়ার একটা আকাঙ্খা থাকে। সেখান থেকে প্রতিযোগীতার শুরু হয়। সেটা অনৈক্য নয়, সেটা দলকে শক্তিশালী করে। জেলা বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক রুুল আমিন বলেন,  আমাদের নারায়ণগঞ্জ বিএনপির মধ্যে কোনো কোন্দল নাই। তাদের ইগো সমস্যা রয়েছে।
এই বিভাগের আরো খবর