শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ছাত্র ফেডারেশনের উদ্যোগে মাধ্যমিক উত্তীর্ণদের সংবর্ধনা প্রদান

প্রকাশিত: ২২ মে ২০১৭   আপডেট: ২২ মে ২০১৭

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪ ডট কম) : বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন নারায়ণগঞ্জ জেলার উদ্যোগে এস এস সি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা প্রদান করা হয়েছে। সোমবার (২২ মে) সকাল ১১ টায় সংগঠনটির জেলা কার্যালয়ে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ছাত্র ফেডারেশন নারায়ণগঞ্জ জেলার সভাপতি মশিউর রহমান রিচার্ড অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব করেন । নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি ভবানী সংকর রায়, গণসংহতি আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ জেলা আহ্বায়ক তরিকুল সুজন, সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক ধীমান সাহা জুয়েল ও ছাত্র ফেডারেশন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভাপতি ছাত্র নেতা গোলাম মোস্তফা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। গোলাম মোস্তফা তার বক্তব্যে বলেন, আমাদের সমাজে খারাপ চিন্তার মানুষগুলো সুসংগঠিত। আমাদের উচিত ভালো চিন্তার মানুষগুলোকে সংগঠিত করে মানবিক সমাজ বিনির্মাণে এগিয়ে আসা। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা আমাদের মধ্যে বিভক্তি তৈরী করে আত্মকেন্দ্রীক হতে শিখায়। আমরা সবাই বড় হয়ে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হতে চাই কারণ এই পেশায় প্রচুর টাকা ও সম্মান রয়েছে। কিন্তু মানুষকে সেবার মনোভাব নিয়ে পেশাগত জীবনে আসি না। শিক্ষা ব্যবস্থার সমালোচনা করে তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা প্রথম থেকেই বাংলা মিডিয়াম, ইংলিশ মিডিয়াম ও মাদ্রাসা শিক্ষা এই ৩ টি ভাগে আমাদের বিভক্ত করে দেয়। যা আমাদের চেতনা ও চিন্তাকে বিভক্ত করেছে, ফলে সমাজে বিভক্তি দেখা দিচ্ছে। আজকে টাকার মূল্যে শিক্ষাকে বিচার করা হচ্ছে, সবাই এ প্লাসকে মূল্যায়ন করছে। ভালো মানুষ ও ভালো ছাত্রের চেয়ে এ প্লাসকে বেশী মূল্যায়ন করায় সকলেই প্রশ্নফাঁস কিংবা নকল যে কোন উপায়ে এ প্লাস পেতে চাইছে। এটা খুবই দুঃখজনক। অনেকেই স্লোগান দেয় ‘যদি হয় প্রশ্ন ফাঁস, পড়বো কেন বারো মাস ?’ এটা একটা ভুল স্লোগান। পড়াশুনাটা কেবল পরীক্ষা পাশের জন্য নয়। আমরা যেন নিজেকে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য এবং সুশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার জন্য পড়াশুনা করি। তিন ধারার বৈষম্যমূলক শিক্ষা ব্যবস্থা বাতিল ও মাতৃভাষায় বিজ্ঞান ভিত্তিক এক ধারা শিক্ষার প্রচলনের মাধ্যমে শিক্ষা ও সমাজ ব্যবস্থার বৈষম্য দূর করা সম্ভব বলে তিনি মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহিদ সুজন, জেলা ছাত্র ফেডারেশন প্রচার সম্পাদক ইলিয়াস জামান, সাংগঠনিক সম্পাদক শুভ্র কুমার, সংবাদিক আল আজম খান সহ বিভিন্ন শাখার নেতৃবৃন্দ। ভবানী সংকর তার বক্তব্যে বলেন, যখন শুনি প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে তখন খুব যন্ত্রনা হয়, আবার যখন ছাত্ররাই বলছে যে ফাঁস হওয়া প্রশ্ন নিয়ে পরীক্ষা দেওয়াটা অনৈতিক তখন ভরসা খুঁজে পাই। এ শিক্ষা ব্যবস্থায় জিপিএ ৫ কে এতটাই লোভনীয় জিনিসে পরিনত করা হয়েছে যে, মানুষ, সমাজ, দেশ কোন কিছুর দিকেই না তাকিয়ে সবাই কেবল এর পেছনেই ছুটছে। এ প্লাসের জন্য ছুটতে গিয়ে পড়ার চাপ বেড়ে যাচ্ছে। ফলে শিল্প, সাহিত্য, বিজ্ঞান কোন কিছুর দিকেই শিক্ষার্থীরা ঝুঁকতে পারছে না। প্রকৃতির সাথে তাদের কোন সম্পর্ক তৈরী হচ্ছে না। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা কেবল পাশ করতে শিক্ষায়, ভালো মানুষ হতে শিক্ষায় না। ভালো ফলাফল করাটাই প্রকৃত শিক্ষা না। মানুষের কথা না ভাবতে পারলে নিজের শিক্ষার আলোয় সমাজকে আলোকিত করতে না পারলে শিক্ষা দেশ ও সমাজের উপকারে না আসলে সে শিক্ষাকে শিক্ষা বলা যায় না। তোমাদের কাছে প্রত্যাশা করি, তোমাদের শিক্ষার আলোয় যেন পৃথিবী আলোকিত হয় । পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে নিপীড়িত মানুষের কল্যাণে তোমাদের শিক্ষা কাজে লাগানো মন মানসিকতা নিয়ে বড় হতে হবে। অনুষ্ঠানের শুরুতেই সংবর্ধিত ছাত্র ছাত্রীদের অভিজ্ঞতা বিনিময়ে ধনকুন্ডা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র রকিবুল ইসলাম ইফতি বলেন, জীবনের প্রথম পাবলিক পরিক্ষায় অংশ গ্রহণ করতে গিয়ে দেখি পরীক্ষার পূর্বেই সকলের হাতে হাতে প্রশ্ন এমনকি আমিও পেয়েছি। পরীক্ষার হলে গিয়ে দেখলাম কিছু কিছু স্কুলের শিক্ষকরা নিজেদের ছাত্রদের প্রশ্ন সমাধান করে দিচ্ছেন এমনকি খাতাও লিখে দিতে দেখা গেছে। শেষ পর্যন্ত ফলাফল প্রত্যাশিত হয় নি। সারা বছর যে ছেলেটা পড়াশুনা করেছে তার ফলাফলের সাথে প্রশ্ন পেয়ে পরীক্ষা দেওয়া ছেলেটার ফলাফলের কোন পার্থক্য ছিলো না। হরিহর পাড়া হাই স্কুলের মো: হামজা বলে, আমি সহ প্রায় সকলের কাছেই পরীক্ষার পূর্বে প্রশ্ন গিয়েছে। যারা প্রশ্ন পেয়ে পাশ করলো তারা সফল হয়েও সফল না। জেলা ছাত্র ফেডারেশনের সহ-সাধারণ সম্পাদক শুভ দেব অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন।
এই বিভাগের আরো খবর