শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

না’গঞ্জে যত্রতত্র ইংরেজি সাইনবোর্ড

প্রকাশিত: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৭

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : উচ্চ আদালতের নির্দেশের প্রায় ৩ বছর পরও সাইনবোর্ড ও বিলবোর্ডে বাংলা লেখা নিশ্চিত করতে পারছে না সরকার। শুধু আদেশ বা চিঠি দিয়েই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে।

সেই আদেশ বাস্তবায়িত হচ্ছে কি না, কিংবা চিঠির বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে কি না, তার তদারকি নেই। মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন সড়কে ঘুরে দেখা যায়, ইংরেজি শব্দে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে যত্রতত্র সাইনবোর্ড। এ ছাড়া ইংরেজিতে (রোমান হরফ) লেখা সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড, নামফলকের ছড়াছড়ি।

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ইংরেজিমাধ্যমের স্কুল, দোকানপাটের বেশির ভাগ সাইনবোর্ড ইংরেজিতে লেখা। জানা গেছে, ২০১৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ এক আদেশে দেশের সব সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড, ব্যানার, গাড়ির নম্বরপ্লেট, সরকারি দপ্তরের নামফলক এবং গণমাধ্যমে ইংরেজি বিজ্ঞাপন ও মিশ্র ভাষার ব্যবহার বন্ধ করতে সরকারকে ব্যবস্থা নিতে বলেন।

সংবিধানের ৩ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলা। এ ছাড়া বাংলা ভাষা প্রচলন আইন, ১৯৮৭-এর ৩ ধারায়ও সরকারি অফিস, আদালত, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে চিঠিপত্র, আইন-আদালতের সওয়াল-জবাব এবং অন্যান্য কাজে বাংলার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

অথচ, জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অনেকেই জানেন না আদালতের এ রকম আদেশের কথা। কেউ কেউ বলছেন, তাদের ব্র্যান্ডের নাম ও লোগো ইংরেজিতে হওয়ার কারণে তারা ইংরেজিতেই সাইনবোর্ড তৈরি করেছেন। অথচ ট্রেড লাইসেন্স (ব্যবসা করার অনুমতি) নেওয়ার সময় সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সাইনবোর্ডে বাংলা ব্যবহারের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়।

অতিরিক্ত একটি সিল দিয়ে ট্রেড লাইসেন্সে লেখা থাকে, ‘সাইনবোর্ড/ব্যানার বাংলায় লিখতে হবে’। কিন্তু লাইসেন্স নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলায় সাইনবোর্ড লিখছে কি না, দেখার দায়িত্ব কার এর জবাবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিটি করপোরেশনের (এনসিসি) একজন আঞ্চলিক কর্মকর্তা বলেন, এটি দেখার দায়িত্ব নগর কর্তৃপক্ষের হলেও প্রতিটি এলাকায় গিয়ে জনে জনে সাইনবোর্ড তদারক করা কঠিন।

এ বিষয়ে নাগরিক সচেতনতাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সাইনবোর্ড ও বিলবোর্ডে বাংলা ব্যবহারের যে নির্দেশ হাইকোর্ট জারি করেছিলেন, তাতে এক মাসের মধ্যে নির্দেশ বাস্তবায়ন এবং বাস্তবায়নের অগ্রগতি জানাতে মন্ত্রিপরিষদ, আইন, স্বরাষ্ট্র, সংস্কৃতি, তথ্য ও শিক্ষাসচিবকে বলা হয়।

আদালতের আদেশের তিন মাস পর ২০১৪ সালের ১৪ মে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডগুলোকে আদেশটি কার্যকর করতে বলে। কিন্তু তা না হওয়ায় ২০১৫ সালের ১৮ আগস্ট আদালত কড়া ভাষায় মন্তব্য করেন, বাংলা ব্যবহারে দৃশ্যত কোনো অগ্রগতি নেই।

পরে ২০১৬ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি এক চিঠির মাধ্যমে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড, ব্যানার, গাড়ির নম্বরপ্লেটে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করার অনুরোধ জানায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর লেখা ওই চিঠিতে বলা হয়, সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড, ব্যানার ইংরেজির স্থলে বাংলায় প্রতিস্থাপিত হয়েছে বলে দেখা যায় না। এটা বাংলা ভাষা প্রচলন আইন, হাইকোর্টের রুল ও আদেশের পরিপন্থী।

এই বিভাগের আরো খবর