বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১০ ১৪৩১

সোনারগাঁয়ে আওয়ামীলীগের দুই গ্রুপের বিরোধ চরমে : সংঘর্ষের আশঙ্কা

প্রকাশিত: ২১ মে ২০১৭   আপডেট: ২১ মে ২০১৭

যুগের চিন্তা ২৪ ডটকম (সোনারগাঁ) : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি সোনারগাঁয়ের সাবেক সাংসদ আব্দুল্লাহ আল কায়সার ও উপজেলা আওয়ামীলীগের পদধারী নেতাকর্মীদের মাঝে দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করায় যে কোন মুহুর্তে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কায় আওয়ামীলীগের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সূত্রে জানা যায়, গত ৫ মে উপজেলার কাঁচপুরে হাজী ওমর আলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে শ্রমিকলীগের ব্যানারে এক সমাবেশের আয়োজন করেন স্থানীয় সাবেক এমপি আব্দুল্লাহ আল কায়সার। এ সমাবেশে উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট সামছুল ইসলাম ভূঁইয়া, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালামসহ অন্যান্য পদধারী নেতাকর্মী এবং উপজেলা চেয়ারম্যান ফোরামকে উপেক্ষা করায় তারা এটি বর্জন করেন। পরে আব্দুল¬াহ আল কায়সারের উক্ত সমাবেশের বিপরীতে উপজেলা আওয়ামীলীগ ও উপজেলা চেয়ারম্যান ফোরাম গত ২০ মে উপজেলার জামপুরে মালিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এক সমাবেশের আয়োজন করেন। উল্লেখিত দুটি সমাবেশেই বক্তারা একে অপরের বিরুদ্ধে কাঁদা ছোড়াছুড়ি করেন। এনিয়ে উভয় গ্রুপের নেতাকর্মীদের মাঝে পূর্ব থেকেই চলমান দ্বন্দ্বে নতুন গতির সঞ্চার হয়ে চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। যে কোন মুহুর্তে তা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের রুপ নেয়ার সম্ভাবনা থাকায় তৃণমূল নেতাকর্মীরা আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন। এ প্রসঙ্গে তৃণমূল নেতাকর্মীরা জানান, সোনারগাঁয়ে ১৯৯৮ সালে আবুল হাসনাতকে সভাপতি ও আব্দুল হাই ভূঁইয়াকে সাধারণ সম্পাদক করে উপজেলা আওয়ামীলীগের কমিটি গঠন করা হয়। পরে ২০০৬ সালে আবুল হাসনাত ও ২০১৩ সালে আব্দুল হাই ভূঁইয়া মারা যান। আবুল হাসনাত মারা যাওয়ার পর থেকে অ্যাডভোকেট সামছুল ইসলাম ভূঁইয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং আব্দুল হাই ভূঁইয়া মারা যাওয়ার পর থেকে মাহফুজুর রহমান কালাম ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উপজেলার আওয়ামীপন্থী সকল নেতাকর্মী এক জোট করে নৌকার প্রার্থী আব্দুল¬াহ আল কায়সারের পক্ষে কাজ করেন। যার ফলশ্র“তিতে আব্দুল¬াহ আল কায়সার বিএনপির প্রার্থী অধ্যাপক রেজাউল করিমকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে এমপি নির্বাচিত হন। এ সময় তার নেতৃত্বে উপজেলা আওয়ামীলীগ পরিচালিত হয়। কিন্তু তখন কিছু সংখ্যক সুবিধাভোগী চাটুকারের কু-পরামর্শে রাজনীতিতে নবাগত আব্দুল্লাহ আল কায়সার উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালামসহ অন্যান্য ত্যাগী নেতাকর্মীদের দূরে সরিয়ে দেন। সেই সূত্রধরে মাহফুজুর রহমান কালামের নেতৃত্বে আওয়ামীলীগের একটি বিদ্রোহী গ্রুপ তৈরী হয়। এরপর থেকে অদ্যাবধি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন, পৌরসভা নির্বাচন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনসহ বিভিন্ন দিবসের রাজনৈতিক কর্মসূচীও উভয় গ্রুপ পৃথকভাবে পালন করে আসছে। এছাড়া উভয় গ্রুপের অন্তঃদ্বন্দ্বের কারণে বিভিন্ন সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ও মামলা-হামলার ঘটনাও ঘটেছে। এদিকে সম্প্রতি সারাদেশে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হওয়ায় সাবেক সাংসদ আব্দুল্লাহ আল কায়সার নৌকার মনোনয়নের জন্য দৌড়-ঝাঁপ শুরু করেছেন। যার বিপরীতে উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম ও সোনারগাঁয়ের রাজনীতিতে সদ্য হাতেখরি স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আবু জাফর চৌধুরী বিরুর নামও শোনা যাচ্ছে। প্রত্যেক মনোনয়ন প্রত্যাশীই জননেত্রী শেখ হাসিনা যাকে নৌকার মাঝি করবেন তার পক্ষেই কাজ করার ঘোষনা দিলেও পরস্পরের বিরুদ্ধে কাঁদা ছোড়াছুড়ি করে যাচ্ছেন। যা উপজেলা আওয়ামীলীগের দ্বিধাবিভক্ত নেতাকর্মীদের মাঝে পূর্বের দ্বন্দ্বকে আরো বৃদ্ধি করে যাচ্ছে এবং যে কোন মুহুর্তে তা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের রুপ নেয়ার সম্ভাবনা থাকায় তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।
এই বিভাগের আরো খবর