বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৫ ১৪৩১

ইতিহাসের স্বাক্ষী হাজীগঞ্জ দূর্গ অপরাধী ও মাদক সেবীদের নিরাপদ আস্তনা

প্রকাশিত: ২৩ অক্টোবর ২০১৭   আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৭

যুগের চিন্তা ২৪ ডটকম :  হাজীগঞ্জ দুর্গ নারায়ণগঞ্জ শহরের হাজীগঞ্জ এলাকায় শীতলক্ষ্যার পশ্চিম তীরে অবস্থিত। এটি খিজিরপুর দুর্গ নামেও পরিচিত। ইতিহাসের সূত্রে জানা যায়, জলদুর্গের বৈশিষ্ট্য মন্ডিত দুর্গটি শীতলক্ষ্যার সঙ্গে পুরাতন বুড়িগঙ্গার সঙ্গমস্থলে নির্মিত হয়। সম্ভবত মুগল সুবাদার ইসলাম খান কর্তৃক ঢাকায় মুগল রাজধানী স্থাপনের পরে নদীপথে মগ ও পর্তুগীজ জলদস্যুদের আক্রমণ প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে দুর্গটি নির্মিত হয়। প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে থাকা সংরক্ষিত দৃষ্টিনন্দন এ পুরাকীর্তি দেখভালের অভাবে আজ ধ্বংসের মুখোমুখি। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, দুর্গের মাঝখানের খোলা জায়গায় খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহার করছে বহিরাগতরা। এর পাশেই মাদকসেবীরা খোলা জায়গাতেই মাদকসেবন করছে। তবে রাতের বেলায় এর তীব্রতা পাল্লা দিয়ে বাড়ে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। দৃষ্টিনন্দন এ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন চতুর্ভুজাকৃতির এই দুর্গের পঞ্চভুজি বেষ্টন-প্রাচীরে রয়েছে বন্দুক ঢুকিয়ে গুলি চালাবার উপযোগী ফোকর এবং চারকোণে গোলাকার বুরুজ। প্রাচীরের চারদিকে অভ্যন্তর ভাগে দেয়ালের ভিত থেকে ১.২২ মিটার উঁচুতে রয়েছে চলাচলের পথ এবং এর দেয়ালেও আছে গুলি চালাবার উপযোগী ফোকর। চারকোণের প্রতিটি বুরুজের অভ্যন্তরভাগে দুর্গ প্রাচীরের  শীর্ষ পর্যন্ত বিস্তৃত সিঁড়ি এবং এর উপর বহিরাগত অংশে রয়েছে বন্দুকে গুলি চালাবার প্রশস্ততর ফোকর। তবে এখন এ দূর্গের দেয়াল গুলোতে সব ধরনের লেখালেখিতে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের নিষেধ থাকার পরও তা দেখভালের অভাবে কেউ মানছেন না। ফলে ইতিমধ্যে শ্রী হারিয়েছে কালের স্বাক্ষী এ দুর্গ। এ ছাড়া মাদকসেবীদের আনাগোনা বেশী হওয়ায় দিনের বেলায়ও এ ঐতিহাসিক জায়গা ভ্রমণ করতে সবাই ভয় পান বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তাছাড়া এত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার চারপাশের পরিবেশই পরিচয় করিয়ে দেয় কতখানি অবহেলায় রয়েছে এ দুর্গ। এর প্রবেশ পথ থেকে শুরু করে পুরো দুর্গই অরক্ষিত। হাজীগঞ্জ দূর্গের চতুর্ভুজাকৃতির অঙ্গনের এক কোণে রয়েছে ইটের তৈরি একটি সুউচ্চ চৌকা স্তম্ভ। এটি সম্ভবত একটি পর্যবেক্ষণ বুরুজ। এই স্তম্ভের অবস্থান থেকেই দুর্গটিকে সমসাময়িক অপরাপর জলদুর্গের সমগোত্রীয় বলে ধরে নেয়া যায়। কামান বসানোর উপযোগী উঁচু বেদীর অবস্থান দুর্গটির একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। নদীর দিকে দূর্গের একমাত্র প্রবেশ পথ থেকে বোঝা যায় যে, শুধুমাত্র নদীপথেই দূর্গের সঙ্গে  যোগাযোগের ব্যবস্থা ছিল। ফটকটির আয়তাকার কাঠামোতে রয়েছে পঞ্চভূজিপ প্রবেশপথ। প্রবেশপথের দু’পাশে রয়েছে খোদাই করা আয়তাকার খিলান এবং এর শীর্ষভাগ পদ্মফুলের অলঙ্করণ শোভিত। দূর্গের অভ্যন্তরে অপর কোনো নির্মাণ কাঠামো না থাকায় প্রতীয়মান হয় যে, বর্ষা মৌসুমে যখন জলদস্যুদের আক্রমণের সম্ভাবনা দেখা দিত কেবলমাত্র তখনই দুর্গটিতে সৈন্য মোতায়েন করা হতো এবং সৈন্যরা সেখানে তাঁবুতে আশ্রয় নিত। তবে, দুর্গ এলাকায় এখন অবাধে মাদকসবী ও নানা রকম অপরাধীদের অবাধ চলাচলের কারণে অনেক দর্শনার্থীরাই মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। অনেকে প্রাচীন এ দুর্গ ভ্রমণে এসে নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছেন বলে জানান। দুর্গ এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এর লাগানো বোর্ড থেকেও লেখা মুছে গেছে। বখাটেরা দূর্গের মধ্যেই নানা জায়গায় আড্ডাস্থল হিসেবে ব্যবহার করছে। আর দেখভালের অভাবে প্রাচীন এ নিদর্শনকে নানাভাবে ধ্বংসের দোড়গোড়ায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এখনই যথাযথভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে স্বল্প সময়ের মধ্যেই ধ্বংস হয়ে যাবে প্রাচীন এ নিদর্শন। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এর মধ্যে থাকা প্রাচীন এ দুর্গকে রক্ষা করে মাদকসেবীদের উচ্ছেদ করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এটা পর্যটকদের জন্য একটা অন্যতম  দর্শনীয়  স্থান হয়ে উঠবে বলে বিশ্বাস এখানকার স্থানীয়দের। মাহফুজ/এস/এস
এই বিভাগের আরো খবর