শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৫ ১৪৩১

কোলন থেকে টক্সিন দ্রুত পরিষ্কারের ৮ উপায়

প্রকাশিত: ৭ এপ্রিল ২০১৭   আপডেট: ৭ এপ্রিল ২০১৭

যুগেরচিন্তা২৪.কম: প্রতিদিন কেবল বাথরুমে যেয়েই আপনি নিজের ৯ কেজি ওজন কমাতে চান? শুনতে হাস্যকর মনে হতে পারে, কিন্তু সত্যি হলো একজন আধুনিক নগরবাসীর মলাশয়ে থাকে অতিমাত্রায় বিষাক্ত বর্জ্যপদার্থ। যা শরীরের অতিরিক্ত ওজনের অন্যতম কারণ। এই বর্জ্যগুলো মলাশয়ের স্বাভাবিক কার্যপ্রণালীতে বাধা দিয়ে পুষ্টিগ্রহণে এবং শরীরের ময়লা নিঃসরণব্যাহত করে।এছাড়া এই ক্ষতিকর বর্জ্যগুলো অন্ত্রে থাকা উপকারী ব্যাকটেরিয়াগুলোরও ক্ষতি করে। এই কারণেই অনেক সময় ওজন কমানো আমাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে।এখন প্রশ্ন হল, তাহলে আমাদের কোলন অর্থাৎ বৃহদন্ত্রে থাকা এই ক্ষতিকর বর্জ্য অপসারণে আমাদের কি করা উচিত? এ প্রতিবেদনে তুলে ধরা হলো ৮টি উপকারী খাদ্যের তালিকা, যারা আমাদের দেহাভ্যন্তরের এই ক্ষতিকর পদার্থগুলোর হাত থেকে দ্রুত মুক্তি পেতে সাহায্য করবে। ১. পর্যাপ্ত পরিমানে পানি পান করা : আসলে বলা উচিত ‘প্রচুর পানি পান করা’। আমাদের মধ্যে অনেকেই পানিশূণ্যতায় ভুগে থাকেন, সে কারণেই অন্ত্রে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। ভেতরকার বর্জ্য পরিষ্কারের জন্য বৃহদন্ত্রের প্রধান নিয়ামক হলো পানি। আর সেটা আমরা যতটা ধারণা করি তার থেকে অনেক বেশি পরিমাণেই। প্রত্যেক পূর্ণবয়স্ক মানুষেরই দৈনিক অন্তত পক্ষে ২ লিটার পানি পান করা উচিত। কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ তো দৈনিক ৩ লিটার পর্যন্ত পানি পানের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আর এটাই শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেওয়ার সব থেকে ভালো পদ্ধতি। ২. বরইয়ের জুস : বরইয়ের জুসকে বলা হয় ‘জুস অব দ্য জুস’। আর এই জুসটি ফাইবার সমৃদ্ধির দিক দিয়ে অনন্য। তাই এটি বৃহদন্ত্র পরিষ্কারের জন্য অত্যন্ত কার্যকর। প্রতিদিন সকালে নাশতার আগে এবং দুপুরের খাবারের পরে ২২৫ মিলিলিটার বরইয়ের জুস খাওয়া বৃহদন্ত্রের জন্য বিশেষ উপকারী। ৩. প্রচুর পরিমাণে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া : উপরেই বলা হয়েছে ফাইবারের একটি ভালো উৎস হচ্ছে বরই। কিন্তু শুধু বরই-ই নয় আরো কিছু খাদ্যদ্রব্য আছে যারা ফাইবারে সমৃদ্ধ এবং মলাশয়ের জন্য বিশেষ উপকারী। সেগুলো হলো- অ্যাভোক্যাডো বেরি (জাম জাতীয় ফল) নারকেল ডুমুর ঢেঁড়শ ব্রাসেলস স্প্রাউট ১৯-৫০ বছর বয়স্ক মেয়েদের ক্ষেত্রে বৃহদন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে দৈনিক ২৫ গ্রাম ফাইবার খাওয়া দরকার। সমবয়সী পুরুষদের ক্ষেত্রে এই চাহিদার পরিমাণ দৈনিক ৩৮ গ্রাম। ৫০ বছরোর্ধ্ব মহিলাদের ক্ষেত্রে এই চাহিদা দৈনিক ২১ গ্রাম এবং পুরুষের ক্ষেত্রে ২০ গ্রাম। ৪. প্রতিদিন লেবুর শরবত খাওয়া : লেবুর শরবতে থাকে প্রচুর পরিমাণে ‘ভিটামিন সি’ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। বিভিন্ন গবেষণা অনুযায়ী, এই উপাদানগুলো বৃহদন্ত্রের জন্য বিশেষ উপকারী। পাশাপাশি লেবু বিপাক প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে সহায়তা করে দেহ থেকে দূষিত পদার্থ দূর করতে সহায়তা করে। ৫. প্রোবায়োটিকের ব্যবহার : প্রোবায়োটিক হলো মূলত স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়া। প্রোবায়োটিক দেহাভ্যন্তরের যেসব ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া বৃহদন্ত্র এবং মলাশয়ের কার্যপ্রণালীতে বাধা তৈরী করে তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করে। সাধারণত, আমাদের শরীরে এমনিতেই প্রচুর পরিমাণে প্রোবায়োটিক থাকে। কিন্তু বিভিন্ন ওষুধ যেমন- অ্যান্টিবায়োটিক এর প্রভাবে সেগুলো ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। তবে নিম্নোক্ত খাবারগুলোর মাধ্যমে দেহাভ্যন্তরের প্রোবায়োটিকের পরিমাণ বাড়ানো সম্ভব- দই লাচ্ছি ডার্ক চকোলেট আচার ৬. খাদ্য তালিকায় তিসিবীজ যুক্ত করা : তিসিবীজ বা ফ্ল্যাক্সসিডে থাকে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, যা মলাশয়ের কাজ ত্বরান্বিত করতে সক্ষম। ফ্ল্যাক্স সিডে অন্যান্য সিরিয়ালের থেকে অনেক বেশি পরিমানে ফাইবার থাকে। প্রতি ১০০ গ্রাম ফ্ল্যাক্সসিডে থাকে ২৭ গ্রাম ফাইবার। যা একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের চাহিদার তুলনায় বেশ সামঞ্জস্যপূর্ণ। আবার এই পরিমাণের বেশি ফাইবার গ্রহণ করলেও ডায়রিয়া হওয়ারও সম্ভাবনা থাকে। ৭. আপেল সিডার ভিনেগার : আপেল সিডার ভিনেগারে থাকে এমন কিছু উপকারী অ্যানজাইম, যা প্রোবায়োটিক এর উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক। আপেল সিডার ভিনেগার টক প্রকৃতির হওয়ায় এটি বছরের পর বছর ধরে অন্ত্রে জমে থাকা বিষাক্ত পদার্থকে নিষ্ক্রিয় করতে সক্ষম। প্রতিদিন একগ্লাস গরম পানিতে দু’ টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনেগার মেশান। ভালো করে ঝাঁকিয়ে পানির সঙ্গে ভিনেগার মিশিয়ে নিয়ে তারপর পান করুন। পায়খানা ঠিকমতো না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন সকালে এই মিশ্রণটি পান করতে থাকুন। ৮. আদা চা খাওয়া : আদা আপনার শরীরকে ভেতর থেকে চাঙা করে। দুর্বল হজম শক্তিকে চাঙা এবং অনিয়মিত পায়খানা পুনরায় নিয়মিত করতে এর জুড়ি নেই। আদা চা তৈরিতে দরকার- ২ টেবিল চামচ পরিষ্কার আদা এক চা চামচের চার ভাগের এক ভাগ হলুদ (কোষ্ঠকাঠিন্য জনিত কারণে) ৫ কাপ পরিষ্কার পানি আদা এবং হলুদকে সেদ্ধ করার মতো পানিকে যথেষ্ট উত্তপ্ত করে নিন। তারপর আঁচ কমিয়ে নিয়ে দশ মিনিট ধরে হালকা তাপ দিতে থাকুন। তারপর পাত্রটিকে চুলা থেকে সরিয়ে নিন। স্বাদ বাড়াতে এর সঙ্গে মধু দিতে পারেন। তবে গর্ভাবস্থায় কিংবা কোনো ওষুধ সেবনকালে এই চা খেতে চাইলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করবেন। তথ্যসূত্র : লিফটার
এই বিভাগের আরো খবর