শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৭ ১৪৩১

বরফকল মাঠ রক্ষায় মানববন্ধন, দূর্বার আন্দোলন গড়ে তোলার অঙ্গিকার

প্রকাশিত: ৪ এপ্রিল ২০১৭   আপডেট: ৪ এপ্রিল ২০১৭

যুগের চিন্তা ২৪ ডটকম : নগর খানপুরে অবস্থিত ঐতিহাসিক বরফকল মাঠ রক্ষায় মনববন্ধন করেছে নাগরিক কমিটি। সংগঠনটির সভাপতি এড. এবি সিদ্দিকের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন প্রখ্যাত সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি। রফিউর রাব্বি তার বক্তব্যে বলেন, আমাদের নীতিকে ধংস করার জন্য যে সকল উপাদান আছে তার সবগুলোই রাষ্ট্র ব্যবহার করছে। অথচ তারা দাবি করছে  আমাদের সংস্কৃতি রক্ষায় তারা কাজ করছে। সরকার একদিকে জঙ্গী নির্মূলের কথা বলছে অপর দিকে জঙ্গী উৎপাদনের উপাদান গুলোতে পানি দিচ্ছে। রেলওয়ে, রাজউক কিংবা বিআইডব্লিওটিএ‘র অধিগ্রহন করা ভুমিগুলো লুন্ঠনের জন্য সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের লোকেরা সদা পস্তুত। বালুর মাঠ দখল করে নিয়েছে সরকার দলীয় সংসদ সদস্যরা। ফলপট্টির রেলওয়ে মাঠ দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণ করতে চেয়েছিল কিন্তু জনগণের বাধার মুখে তা সম্ভব হয়নি। রাজুক এই নগরের বহু জায়গা বিক্রয়ের নামে লুন্ঠন  করতে চেয়েছিল। নাগরিক কমিটির আন্দোলনের মুখে তা পারেনি। প্রকৃতি ধ্বংসকে উন্নয়ণ  নাম দিয়ে চালানোর চেষ্টা করছে সরকার। মাদক বিস্তারের মাধ্যমে আগামী প্রজন্মকে মেরুদন্ডহীন করে দেয়া হচ্ছে। সরকারের কাছে আকুতি মিনতি জানিয়ে মাঠ রক্ষা হবেনা। প্রজন্মকে রক্ষা করতে চাইলে তা কেড়ে নিতে হবে। সে এলাকার  জনগণ জেগে উঠলে প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি এমনকি সা¤্রাজ্যবাদী শক্তির পক্ষেও এ মাঠ দখলে নেয়া সম্ভব হবেনা। নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বলেন, বর্তমান ডি সি এস পি দুজরেনই দুজন সংসদ সদস্যের হয়ে কাজ করছেন। আমি নারায়ণগঞ্জের মানুষকে এই দুজন সংসদ সদস্য ও ডিসি এসপির ব্যাপারে সতর্ক থাকার আহ্বান জানাই। এই ডিসি  এস পি রা নারায়ণগঞ্জের লুন্ঠন কে আরো দীর্ঘায়িত করতে চায়। আওলাদ হোসেন বলেন, আমাদের জেলা প্রশাসকের এ মাঠ রক্ষার ব্যাপারে কোন ভুমিকা নেই। তিনি নারায়ণগঞ্জ ক্লাব এবং বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে বক্তৃতাদেন তিনি র্ফাস্ট বয় ছিলেন। তিনিওতো একদিন ছাত্র ছিলেন। ছাত্রদের গড়ে তোলার জন্য মাঠের বিকল্প নেই। আমাদের মাঠ দখল করে নিয়ে যাচ্ছে সে ব্যাপারে জেলা প্রশাসকের কোন মাথা ব্যথা নেই। আজকে নারায়ণগঞ্জে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয়েছে, ভূমিদস্যুরা সারা নারায়ণগঞ্জ দখল করে নিচ্ছে, দখল করে নিচ্ছে বরফকল মাঠ। মানব বন্ধনের সভাপতি এড. এ.বি. সিদ্দিকী তার বক্তব্যে বলেন, দক্ষিণ দিকে আলাউদ্দীন খাঁ ষ্টেডিয়াম, উত্তর দিকে বরফকল মাঠ, এই দুই মাঠ ছাড়া নারায়ণগঞ্জে আর কোন মাঠ নেই। এ অবস্থাতে বরফকল মাঠটি বন্ধ হতে চলেছে। এক সময় জাতীয় পর্যায়ে খেলাধূলায় নারায়ণগঞ্জের ছেলেদের উল্লেখ যোগ্য অংশগ্রহন ছিল। গত ২০ বছরে ধীরে ধীরে তা হারিয়ে গেছে। সচেতন নাগরিক হিসাবে আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে সকল নাগরিক সামাজিক সব সংগঠনকে নিয়ে দূর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা। এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, জেলা কমিউনিষ্ট পার্টি সম্পাদক মন্ডলির সদস্য বিমল কান্তি দাস, জেলা বাসদ সমন্বয়ক নিখিল দাস, সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক ধীমান সাহা জুয়েল, আমরা নারায়ণগঞ্জবাসীর সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন মন্টু, বাপার কার্যপরিষদের সদস্য কাজী জলিল উদ্দীন দুলাল, সুজন এর এফ এম এইচ তপু, ফতুল্লা থানার যুব কমান্ড সভাপতি সেলিম আহম্মেদ,  ছাত্র ফেডারেশন জেলা সভাপতি মশিউর রহমান রিচার্ড ও ছাত্রফন্টের সভাপতি সুলতানা আক্তার সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক,সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের ব্যক্তি বর্গ। পূর্ববর্তী বক্তাদের মধ্যে তরিকুল সুজন বলেন, এ শহরে মাঠ-ঘাট, নদী, বন-প্রকৃতি নেই। ফলে একটি অসুস্থ সমাজ তৈরি হচ্ছে। আজকের শিশুরা শৈশবহীন গ্যাজেট হিসেবে তৈরি হচ্ছে। হাজীগঞ্জ মাঠ দখল হয়ে গিয়েছে, সেখানকার চাঁন পুকুর আজ নিশ্চিহ্ন। বরফকল মাঠ দখলের পায়তারা চলছে। শুধুমাত্র জনগন ঐক্যবদ্ধ হলেই এই মাঠ সাধারণ মানুষের কাছে থাকবে। মাঠ থাকলে তারুণ্য থাকবে। মাঠ ঘাট নদী ছাড়া এ শহর বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাচ্ছে। একটি সুস্থ প্রজন্ম তৈরি করতে এ মাঠ রক্ষার লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। ধীমান সাহা জুয়েল বলেন, কোন সভ্য দেশে মাঠের জন্য আন্দোলন হয় কি না জানা নেই। স্কুলে দাড়োয়ান দিয়ে বন্দী রাখা হয় ছেলেমেয়েদের। আর ফ্রি ওয়াইফাই দিয়ে উঠতি বয়সী ছেলেদের ফেসবুকে আসক্ত করে রাখছে জনপ্রতিনিধিরা।  কিন্তু খেলার মাঠ দিচ্ছে না। খেলার মাঠ দিলে একটা সুন্দর শৈশব দেয়া যাবে। জঙ্গীবাদ রুখা সম্ভব হবে। নিখিল দাস বলেন, খেলাধূলার সুযোগ না দিলে জঙ্গীবাদ রুখতে পারবে না। একটি স্বার্থান্বেসী মহল এ মাঠে নিজেদের ব্যবসায়িক  সুবিধার জন্য মেলা বসায়, গরুর হাট বসায়। কিন্তু যখন মাঠ দখল হয়ে যায় তখন তারা নির্বিকার। বিমল কান্তি দাস বলেন, নারায়ণগঞ্জের মানুষ গুলো ফার্মের মুরগীর মতো বেড়ে উঠছে। একে একে নিঃশ্বাস নেয়ার মতো সকল জায়গায়ই দখল হয়ে যাচ্ছে। ঐতিহাসিক এ মাঠে বহুতল ভবন নির্মাণের পায়তারা করছে বিআইডব্লিটিএ। স্বাধীনতার আগে থেকেই স্থানীয়রা খেলাধুলা করে আসছে এই মাঠে। জাতীয় ফুটবল দলের এমিলি, জাকির, স্বপন, তপু, হানিফ, জামাল, সেলিম জাতীয় ক্রিকেট দলের মোহাম্মদ শহীদ, মোহাম্মদ শরীফ, রনি তালুকদারসহ অনেকেই এই মাঠে খেলেছেন।
এই বিভাগের আরো খবর