বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১১ ১৪৩১

জনগণের সম্পৃক্ততাসহ সচেতনতা বাড়লে ভুয়া পুলিশ, ডিবি ও র‌্যাব প্রতিরোধ করা সহজ হবে

প্রকাশিত: ৪ মার্চ ২০১৭   আপডেট: ৪ মার্চ ২০১৭

যুগের চিন্তা ২৪ ডটকম : রাজধানী ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে দুষ্কৃতিকারীদের একাধিক চক্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে ছিনতাই, অপহরণের পর মুক্তিপণ দাবি ও ডাকাতির ঘটনা ঘটাচ্ছে। এসব চক্র সাধারণত দুটি গাড়ি নিয়ে অপারেশনে নামে। কখনও দুটি মাইক্রোবাস, কখনও একটি প্রাইভেট কার ও একটি মাইক্রোবাস থাকে। গাড়িচালক এই চক্রেরই সদস্য। গাড়িতে থাকে হ্যান্ডকাফ, খেলনা পিস্তল, কখনও আসল অস্ত্র, বেতের মোটা লাঠি, ওয়াকিটকিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যবহার্য সাজ-সরঞ্জাম। এই চক্রের সদস্যরা মাথার চুল কাটে ছোট করে। অনেক সময় গাড়িতে নারী সদস্য রাখা হয়। কখনও জনগণের হাতে অথবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ার আশংকা থাকলে নারী সদস্যকে সামনে রেখে পার পাওয়ার চেষ্টা করে তারা। জানা গেছে, এসব চক্রের অন্যতম টার্গেট বিভিন্ন ব্যাংক। কেউ ব্যাংক থেকে টাকা তুলে বের হওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে ব্যাগ বা গাড়ি তল্লাশির নামে ওই ব্যক্তিকে নিজেদের গাড়িতে উঠিয়ে টাকা ছিনিয়ে নেয়। একইভাবে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করা হয়। ভুয়া পুলিশ, ডিবি ও র‌্যাব পরিচয় দেয়া অপরাধীদের অনেককে পুলিশ ও র‌্যাব গ্রেফতারও করেছে বিভিন্ন সময়। তবে তাদের অনেকেই অল্প সময়ের মধ্যে জামিনে বেরিয়ে ফিরে গেছে একই পেশায়। পেশাদার অপরাধীরা মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে এসব অপকর্ম করে থাকে। তাদের মূল টার্গেট হচ্ছে মানুষকে বিভ্রান্ত করা। আর এতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভাবমর্যাদাক্ষুন্ন হয়। ভুয়া র‌্যাব, পুলিশ, ডিবি ও সেনা সদস্য পরিচয়ে ছিনতাই, ডাকাতিসহ বাড়ছে প্রতারণার ঘটনা। এসব ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনেক অবসরপ্রাপ্ত সদস্যের সংশ্লিষ্টতাও পাওয়া গেছে। এ ধরনের অপকর্মের ঘটনায় ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হওয়ায় চরম বিড়ম্বনায় পড়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। মাঝে মধ্যে এসব অপরাধীর কেউ কেউ গ্রেফতার হলেও বেশির ভাগই থেকে যাচ্ছে অধরা। বিশেষ করে অপহরণ সংক্রান্ত অপরাধের সাথে জড়িতরা রহস্যজনক কারণে আড়ালেই থেকে যাচ্ছে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা বলে আসছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নামে যেসব অপরাধের ঘটনা ঘটছে তার সাথে পেশাদার সন্ত্রাসীরাই জড়িত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয় ব্যবহার করে অভিনব কায়দায় প্রতারণা করে যাচ্ছে একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র। এসব ভুয়া র‌্যাব, ডিবি পুলিশ ও থানা পুলিশের হাতে প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এর ফলে র‌্যাব, ডিবি পুলিশ ও থানা পুলিশের সুনাম চরমভাবে ক্ষুন্ন হচ্ছে। তাদের পরিচয় বুঝতে না পেরে সর্বস্বান্ত হয়ে ঢালাও ভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি অশ্রদ্ধা বাড়ছে ভুক্তভোগীদের। তাই এই চক্রের অপতৎপরতা ঠেকাতে কঠোর ভূমিকায় নেমেছে পুলিশ। একই সঙ্গে জনগণকে এদের ব্যাপারে সচেতন হওয়ারও অনুরোধ জানানো হয়েছে পুলিশের ঊর্ধ্বতন মহলের পক্ষ থেকে। কিন্তু, কীভাবে চেনা যাবে এসব ভুয়া পুলিশকে? এ বিষয়ে কয়েকটি বৈশিষ্ট্যের কথা জানিয়েছেন পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। এগুলো হলোঃ- ১/ ব্যবহৃত ওয়াকিটকি চালু আছে কিনা লক্ষ্য করুন। ভুয়া পুলিশ সদস্যদের ওয়াকিটকি কখনও চালু থাকে না এবং কোনো শব্দও পাওয়া যায় না। কারণ সেটি খেলনা ওয়াকিটকি। ২/ সাদা পোশাকে পুলিশ কিংবা র‌্যাব কোনো অভিযান পরিচালনা করলে অবশ্যই গায়ে জ্যাকেট পরিধান করে ও গলায় পরিচয়পত্র ঝোলানো থাকে। কিন্তু ভুয়া র‌্যাব-পুলিশ সদস্যরা বেশির ভাগ সময় কোনো ধরনের জ্যাকেট বা পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখে না। ৩/ ভুয়া র‌্যাব-পুলিশ চক্র সব সময় খেলনা পিস্তল ব্যবহার করে, তারা কখনোই লং আর্মস যেমন শর্টগান বা এসএমজি সঙ্গে রাখে না। ৪/ গতিবিধি ও আচরণ পর্যবেক্ষণ করুন। ভুয়া র‌্যাব-পুলিশ সদস্যরা বাসায় ঢুকেই টাকা, অলংকার ও মূল্যবান মালামাল নেওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে। তাদের আচরণে উগ্রতা ও রুক্ষভাব পরিলক্ষিত হয়। ৫/ এই চক্রের সদস্যদের পারস্পরিক কথোপকথন পর্যবেক্ষণ করার চেষ্টা করুন। এরা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে এবং চোর ডাকাতের মতো আচরণ করতে থাকে। ভুয়া র‌্যাব-পুলিশ দেখলে করণীয় : আপনার নিজের নিরাপত্তা ও এসব প্রতারণাকারী চক্রের হাত থেকে রেহাই পেতে সবসময় নিজের বুদ্ধি-বিবেক ও পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা প্রয়োগ করুন। ভুয়া র‌্যাব-পুলিশের ঝামেলায় পড়লে বা মুখোমুখি হলে কৌশলে নিকটস্থ থানা বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের অবহিত করুন। যদি শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যায় যে এরা ভুয়া র‌্যাব-পুলিশ সদস্য এবং ব্যবহৃত অস্ত্রটিও খেলনা তাহলে সঙ্গে সঙ্গে সাহসিকতার সঙ্গে তাদেরকে প্রতিহত করুন ও পুলিশকে খবর দিন এবং আপনার এলাকার সংশ্লিষ্ট বিট অফিসারকে অবহিত করুন। সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, মূলত পুলিশ বা অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী থেকে বহিষ্কৃত সদস্যরাই সাজার মেয়াদ শেষে সংঘবদ্ধ হয়ে এ ধরনের অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাবেক সদস্য হওয়ায় তারা বাহিনীর নিয়ম-শৃঙ্খলার বেশ কিছু বিষয় বেশ ভালোভাবেই জানে। এ কারণে সাদা চোখে তাদের ধরা মুশকিল। আর এরই সুযোগ নিয়ে কখনো র‌্যাব, কখনো ডিবি আবার কখনো পুলিশের পরিচয় ব্যবহার করে এরা অভিনব কায়দায় প্রতারণা করে যাচ্ছে। কখনও কখনও তারা ডাকাতির মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছে। তবে একটু খেয়াল করলে তাদের পরিচয় জেনে ফেলা খুব একটা কঠিন নয়। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, এদের অপতৎপরতা সারাদেশেই কমবেশি দেখা যাচ্ছে। রাজধানী ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, রূপগঞ্জ, সিদ্ধিরগঞ্জ, সোনারগাঁওসহ বিভিন্ন এলাকায় ব্যাংক, বীমা প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়ীদের অফিস, বাসা-বাড়ি সবখানেই সুযোগ বুঝে এরা হানা দিচ্ছে। এদের মধ্যে যারা ধরা পড়েছে তাদের প্রায় সবার মধ্যে কিছু অভিন্ন বৈশিষ্ট্য পাওয়া গেছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের ধারণা, বাকিরাও একই রকম পরিচয় ব্যবহার করে অন্যদের প্রতারিত করার চেষ্টা চালায়। তাই, সূক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করলে এই বৈশিষ্ট্যগুলোই সাধারণ মানুষের জন্য প্রতারণা থেকে বাঁচার রক্ষাকবচ হতে পারে। ডিএমপির জনৈক কর্মকর্তা জানান, ছাঁটাচুল, কোমরে পিস্তল, হাতে হ্যান্ডকাপ, গায়ে জ্যাকেট- যাতে ইংরেজিতে লেখা ডিবি, বিচরণ করছে দামি মাইক্রোবাসে। সংঘবদ্ধ এদের দেখতে পুলিশের এই বিশেষ শাখার সদস্য বলে মনে হলেও এরা আসলে দুর্ধর্ষ ছিনতাইকারি। মানুষের চোখ ফাঁকি দিতে তাদের এ অভিনব কৌশল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে যারা প্রতারণা করে আসছে তারা বেশিরভাগই স্মার্ট। তাদের বেশভুষা আচার-আচরণ চলাফেরা এমনকি চুলের ছাঁট পর্যন্ত হয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মতো। পুলিশ বা অন্যান্য বাহিনী থেকে বিভিন্ন কারণে চাকরিচ্যুত হওয়ায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন রকম আইন-কানুন ও কৌশল তাদের জানা রয়েছে। কিন্তু, তাদের ধরতে হলে লক্ষ্য করতে হবে তাদের আচরণ ও তারা যেসব সরঞ্জামাদি ব্যবহার করে সেগুলো। তিনি আরও বলেন, এই চক্রের সদস্যরা সাদা পোশাকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে বাসা-বাড়ি বা অফিসে ঢোকে। তারা সাধারণত হ্যান্ডকাফ, খেলনা পিস্তল, খেলনা ওয়াকিটকি, দড়ি ও ভুয়া পরিচয়পত্র ব্যবহার করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারা মাইক্রোবাস ব্যবহার করে। অনেক সময় তারা পুলিশের পোশাক, বাঁশি এবং ডিবি লেখা জ্যাকেটও ব্যবহার করে থাকে। বিশেষ করে ব্যাংক, বীমা ও বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আগে থেকেই ওঁৎ পেতে থাকে। কেউ টাকা তুললে বা জমা দিতে এলে তার পিছু নেয়। পরে সুবিধামতো জায়গায় কৌশলে মাইক্রোবাসে তুলে খেলনা পিস্তল ঠেকিয়ে ও নানা ধরনের ভীতি প্রদর্শন করে সবকিছু হাতিয়ে নেয়। আবার কখনও কখনও মুক্তিপণের মতো ঘটনা সাজিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়। মাঝে মধ্যে এরা ডাকাতিতেও সংশ্লিষ্ট হয়। তবে, র‌্যাব-পুলিশের পরিচয় ব্যবহার করলেও যেহেতু তারা প্রতারক ও ডাকাতির মানসিকতা রয়েছে তাই সবকিছুতেই তাদের মধ্যে তাড়াহুড়ার মনোভাব লক্ষ্য করা যায়। তাদের আচার-আচরণ ও অন্যান্য বিষয়গুলো একটু ভালভাবে খেয়াল করলেই ওদের ভুয়া পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, রূপগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে আছে অন্তত ২০-২৫টি প্রতারক চক্র। তারা র‌্যাব-পুলিশ, ডিবি পুলিশ ও সেনাবাহিনীর পোশাক পরিধান করে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছে। শুধু পোশাকই নয়, তারা পুলিশের ওয়ারলেস সেট, হ্যান্ডকাফ ব্যবহার করে সড়ক-মহাসড়কে ছিনতাই-ডাকাতি করছে। এমনকি বাসাবাড়িতে গিয়েও তারা প্রতারণাসহ ডাকাতিও করছে। এতে র‌্যাব-পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়ে জনমনে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। সংঘবদ্ধ এসব প্রতারক চক্র কখনো নিজেদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট কখনো তারা সেনাবাহিনীর মেজর, লেফটেন্যান্ট কর্নেল এবং পুলিশের ডিসি, এসপি বলেও পরিচয় দেয়। এসব পরিচয়ে তারা বিভিন্ন অফিস, হোটেল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অভিযানের নাম করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়। অপারেশনে তারা ভুয়া সার্চ ওয়ারেন্টের কাগজপত্রও দেখায়। অনেক সময় সড়কের বিভিন্ন স্থানে দাঁড়িয়ে পথচারীদের দেহ তল্লাশি করে। এতে সাধারণ মানুষ ভয় পেয়ে তাদের প্রতারণার শিকার হয়। বিভিন্ন ব্যাংকের বিত্তবান গ্রাহকরা সংঘবদ্ধ এসব ছিনতাইকারীদের প্রধান টার্গেট। ব্যাংক গুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত না থাকার সুযোগে প্রথমে ছিনতাইকারীরা ব্যাংকের ভেতরে প্রবেশ করে একজন গ্রাহককে টার্গেট করে তার টাকার পরিমাণ জেনে নেয়। গ্রাহক টাকা উত্তোলন শেষে ফেরার পথে বাইরে থাকা ডিবি পুলিশ অথবা র‌্যাবের পোশাক পরিহিত অপেক্ষমাণ ছিনতাইকারীদের জানিয়ে দেয়। শুরু হয় ওই গ্রাহকের পিছু নেয়া। কিছুদূর গেলে সুযোগ বুঝে ছিনতাইকারীরা গ্রাহকের বহনকৃত গাড়িটি গতিরোধ করে। পরে তারা নিজেদের র‌্যাব অথবা ডিবি পুলিশের পরিচয় দিয়ে গ্রাহকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলাসহ বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা আছে বলে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে জোরপূর্বক তাদের গাড়িতে তুলে নেয়। ছিনতাইকারীরা আটককৃত ব্যক্তিকে মারধর করে টাকাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র হাতিয়ে নিয়ে সুযোগ বুঝে সড়কের নির্জনস্থানে ফেলে দেয়। নাম পরিচয় না জানা এবং চিনতে না পারায় ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে মামলাও করা যায় না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে এরা মূর্তিমান আতঙ্ক। যেসব অপরাধ হচ্ছে তার বেশির ভাগই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে। এতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ইমেজ যেমন ক্ষুণœ হচ্ছে তেমনি বিব্রত হচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ভুয়া র‌্যাব, পুলিশ ও ডিবি সদস্য পরিচয়ে ছিনতাই, ডাকাতি বা প্রতারণা ফৌজদারি অপরাধ। এসব অপরাধীরা গ্রেফতার হচ্ছে। এদের ধরার জন্য র‌্যাবের কার্যক্রম অব্যাহত আছে। খোদ বর্তমান সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল সংসদে দাড়িয়ে বলেছেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখে ধুলো দিয়ে ছদ্মবেশে ভুয়া পুলিশ পরিচয়ে বিভিন্ন অপরাধের ঘটনা সংঘটিত হওয়ায় দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারের ভাবর্মূতি ক্ষুন্ন হচ্ছে। অপরাধীরা তাদের অপরাধের ধরন সময়ে সময়ে পরিবর্তন করে থাকে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখে ধুলো দিয়ে নিজেদেরকে ছদ্মবেশে রেখে ভুয়া পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতি, ছিনতাই, অপহরণের মতো অপরাধ সংঘটিত হওয়ার ঘটনা সম্প্রতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। এতে দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারের ভাবর্মূতি ক্ষুন্ন হচ্ছে। এ বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যে এ ধরনের কিছু সংখ্যক প্রতারক গোষ্ঠীকে গ্রেফতারপূর্বক আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে, কেন এবং কিভাবে এটা ঘটছে? এক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর শৈথিল্য ও উদাসীনতার বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। সঙ্গতবিবেচনা থেকেই সংঘবদ্ধ চক্র এই সুবিধা কাজে লাগাচ্ছে। বলা যায়, ভুয়া পোশাকধারীদের একটি বিস্তৃত নেটওয়ার্ক রয়েছে। এই নেটওয়ার্ক একদিনে বা একক প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠেনি। এর সাথে অন্য কোন কোন মহলও হয়ত যুক্ত। ইতোপূর্বে যারা এ ধরনের অপরাধে গ্রেফতার হয়েছে তারা কোন উদাহরণযোগ্য সাজা পেয়েছে এমন কথা জানা যায়নি। দিনে-রাতে এসব অপকর্ম কিভাবে হচ্ছে তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। এসব ঘটনা, এর শাখা-প্রশাখা খুঁজে বের করতে না পারলে নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে না। সমাজে প্রকৃত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নাগরিক নিরাপত্তার ভাবনা সক্রিয় করা দরকার। সে লক্ষ্য অর্জনে প্রতিটি পাড়ায়-মহল্লায় প্রকৃত সন্ত্রাসী-মাস্তানের খোঁজ-খবর রাখার দায়িত্ব আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর। তারা এ ব্যাপারে যতœবান হলে অবশ্যই ঘটনা রোধ করা সম্ভব। জনগণের সম্পৃক্ততা এবং সচেতনতা বাড়লে ভুয়া র‌্যাব-ডিবি বা ভুয়া পুলিশ প্রতিরোধ করা সহজ হবে। লেখক- আশিকুর রহমান হান্নান, সাংবাদিক ও কলামিষ্ট।
এই বিভাগের আরো খবর