বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১১ ১৪৩১

চাঞ্চল্যকর লোমহর্ষক ৫ হত্যা মামলার একমাত্র আসামী মাহফুজের মৃত্যুদন্ড (আপডেট)

প্রকাশিত: ৭ আগস্ট ২০১৭   আপডেট: ৭ আগস্ট ২০১৭

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪ ডটকম) : নগরীর বাবুরাইল এলাকার আলোচিত লোমহর্ষক ৫ হত্যা মামলার রায়ে একমাত্র আসামী মাহফুজকে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দিয়েছে আদালত। সে সাথে পাঁচ হাজার টাকা দন্ড প্রদান করা হয়। সোমবার সকাল ১১ টা ৪০ মিনিটি জেলা ও দায়রা জজ বেগম হোসনে আরা আক্তারের আদালত মামলার প্রধান আসামী ভাগ্নে মাহফুজের উপস্থিতিতে এ রায় ঘোষনা করেন। এ সময় মাহফুজকে বিষন্ন অবস্থায় দেখা যায়। রায় প্রসঙ্গে রাষ্ট্র পক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটার (পিপি) এডভোকেট ওয়াজেদ আলী খোকন বলে, বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার প্রতি মানুষের যে অনাস্থা ছিলো নারায়ণগঞ্জ জেলা এটা প্রমাণ করেছে অত্যন্ত অল্প সময়ের মধ্যে মামলার বিচার কাজ শেষ করা যায় প্রচলিত আইনে। বিজ্ঞ আদালতের রায়ে আমরা রাষ্ট্রপক্ষ ও বাদীপক্ষ সন্তূষ্ট। এ রায় একটি যুগান্তকারী রায়। আসামী তার উপযুক্ত শাস্তি পেয়েছে আমরা সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। বিচারক অবজারভেশনে এ কথাও বলেছেন, মহামান্য উচ্চ আদালতে অর্থাৎ হাইকোর্ট ডিভিশনে অনুধাবন সাপেক্ষে এ মৃত্যুদন্ড রশিতে ঝুলিয়ে দিতে হবে। সে সাথে সাথে অন্যান্য যে চারজন কে হত্যা প্রসঙ্গে বলেছেন তাদের বেলায়ও মাহফুজকে আলাদা আলাদাভাবে চার্জে ফাসিঁ দেয়া হয়। কিন্তু কার্যকর হবে একই সাথে মহামান্য উচ্চ আদালতের আদেশে, সে সাথে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা দিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, আসামী মাহফুজের সাথে তার মামীর সাথে একটি পরকীয়া ছিলো। ঢাকার ধানমন্ডি কলাবাগান বস্তিতে বসবাস করার সময় মাহফুজ তার মামীর সাথে অনৈতিক সম্পর্কে লিপ্ত হলে মামা তাসলিমার স্বামী টের পেলে নারায়ণগঞ্জে বাসা ভাড়া নিয়ে চলে আসে। পরবর্তী পর্যায়ে আসামী মাহফুজও নারায়ণগঞ্জে চলে আসে। ঘটনার দিন অর্থাৎ দিবাগত রাত্রিতে তাসলিমার বাড়িতে প্রবেশ করে মাহফুজ খাটের নিচে শুয়ে ছিলেন। এটা টের পেয়ে যায় মোশারফ। তখন মোশারফ তাকে খাটে এনে শোয়ায়। সম্ভবত মোশারফ পারিবারিকভাবে বিচার করাতে পারে এই ভয়ে মাহফুজ ঘর থেকে শিলপাটা নিয়ে এক এক করে পুতা দিয়ে কাউকে ওড়না পেচিঁয়ে, শার্ট,  রশি পেচিঁয়ে, গলায় শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। অর্থাৎ পরকিয়া থেকে এ হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়। মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামী মাহফুজের মামা (তাসলিমার স্বামী) শফিকুল ইসলাম বলেন, আমি এ রায় সন্তুষ্ট, অল্প দিনের  মধ্যে সরকার এ রায় ঘোষনা করেছেন। আমি সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা ঘোষনা করছি। শফিকুল ইসলাম আরো বলেন, রায় হয়েছে কিন্তু এ রায় যেন দ্রুত বিচার হয় এবং ফাঁসির দড়িতে ঝুলে সেই দিনের প্রত্যশায় রয়েছি। এ রায়ে আসামী পক্ষের আইনজীবী সুলতানুজ্জামান বলেন, বিজ্ঞ আদালাত আজ যে রায় প্রদান করেছেন আসামীপক্ষ মনে করে এ রায়ে সে অসন্তুষ্ট। সে প্রকৃত বিচার পায়নি। আমি মনে করি এ রায়ের বিরুদ্ধে আসামীপক্ষ যদি মহামান্য উচ্চ আদালতে আপিল দায়ের করে সে ডেথরেফারেন্সে ন্যায় বিচার পাবে এবং খালাস পাবে বলে বিশ্বাস করি। আসামী মাহফুজের বাবা বলেছেন আপিল করবেন। আইন অনুযায়ী সাত দিনের মধ্যে আপিল করতে হয়। রায়ের নকল পেলে যতদ্রুত সম্ভব আমরা আপিল দায়ের করবো। তিনি আরো বলেন, আমি এ মোকদ্দমাটি আসামী মাহফুজপক্ষের কোন লোকজন না থাকায় স্ট্রেট ডিফেন্স আইনজীবী হিসেবে মোকাদ্দমাটি পরিচালনা করিয়াছি। স্ট্রেট ডিফেন্স আইনজীবী হিসেবে যতটুকু প্রতিকার দেওয়া সম্ভব আমি চেষ্টা করেছি। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১৬ ই জানুয়ারী রাতে বাবুরাইল খানকা মোড় এলাকার (অশোক আলী ভিলা) ফ্ল্যাটের তালা ভেঙ্গে তাছলিমা (৩৫), শান্ত (১০), মেয়ে শুরাইরা (৫), তাছলিমার ছোট ভাই মোশারফ (২২), ও লামিয়া (২৫) এর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ডাঃ রির্পোট অনুয়ায়ী তাদের শিলপোতা ও শ্বাসরোধ করে মারা হয়েছে। ঘটনার পরেরদিন ১৭ জানুয়ারী নিহত তাছলিমার স্বামী শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে সন্দেহ ভাজন হিসাবে তার ভাগ্নে মাহফুজ, নাজমা ও শাহজাহানের নাম উল্লেখ্য করে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল  থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশী তদন্তে এ ঘটনায় নাজমা ও শাহজাহানের কোন সম্পৃক্ততা না থাকায় তাদেরকে অব্যাহতি দেয়া হয়। ১৭ জানুয়ারী রাতেই মামলাটি জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হলে গোয়েন্দা পুলিশ অভিযান চালিয়ে ১৮ জানুয়ারী মাহফুজ ও নাজমাকে গ্রেফতার করেন। বিভিন্ন স্বাক্ষ্য প্রমানের ভিত্তিতে ২১ জানুয়ারী আদালতে মাহফুজ ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি জবান বন্দিতে খুনের কথা স্বীকার করেন।
এই বিভাগের আরো খবর