
অবশেষে পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ পেয়েছেন বরিশালের হিজলার আলোচিত কলেজছাত্রী আসপিয়া ইসলাম। তার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে কনস্টেবলের নিয়োগপত্র। শনিবার রাত ৮টার দিকে জেলা পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন স্বাক্ষরিত নিয়োগপত্র আসপিয়ার হাতে তুলে দেন হিজলা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মিজানুর রহমান। তার চাকরি পাওয়ার খবরে পরিবার থেকে শুরু করে পাড়া-প্রতিবেশীর মাঝে বইছে আনন্দের বন্যা। রবিবার (২৬ ডিসেম্বর) নিয়োগপত্র পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বাংলা ট্রিবিউনের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন আসপিয়া। আসপিয়া ইসলাম সরকারি হিজলা ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছেন গত বছর। ১৫ বছর ধরে উপজেলার খুন্না-গোবিন্দপুর গ্রামের একজনের জমিতে আশ্রিত হিসেবে থাকছে তার পরিবার। আসপিয়া মৃত সফিকুল ইসলামের মেয়ে। পরিবারে তিন বোন ও এক ভাই এবং মা রয়েছেন। ভাই গার্মেন্টেসে কর্মরত। তার আয় দিয়েই চলে তাদের সংসার। আসপিয়া বলেন, শনিবার রাতে হাতে নিয়োগপত্র পেয়েছি। নিয়োগপত্র পাওয়ার পর বারবার তা পড়ে দেখেছি। চাকরি পাওয়ায় অনেক খুশি হয়েছি। পরিবার ও প্রতিবেশীরাও খুশি হয়েছে। আমি আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ। হিজলা থানা সূত্রে জানা যায়, আসপিয়ার নিয়োগপত্রে ২৮ ডিসেম্বর সকাল ১০টার মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবহার্য জিনিসপত্র নিয়ে জেলা পুলিশ লাইনসে তাকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়। সেখান থেকে রাজশাহীর সারদা পুলিশ একাডেমিতে আনুষ্ঠানিকতা শেষে মহিলা টিআরসিদের ছয় মাসের প্রশিক্ষণের জন্য তাকে রংপুরে পাঠানো হবে। এরপর তাকে পদায়ন করা হবে।
পুলিশ ট্রেনিংয়ে যাওয়ার চিঠি হাতে আসপিয়া বরিশালের পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন বলেন, আসপিয়াকে কনস্টেবল পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ছয় মাসের মৌলিক প্রশিক্ষণে অংশ নিতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণ সফলভাবে সম্পন্ন করতে পারলে তাকে পদায়ন করা হবে। প্রথম পর্যায়ে তাকে প্রশিক্ষণে অংশ নিতে বলা হয়েছে। এদিকে, আসপিয়া ও তার পরিবারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরের নির্মাণকাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। দু’একদিন পরপর আসপিয়া ও তার পরিবারের সদস্যরা নিজেদের ঠিকানা দেখে আসেন। হিজলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বকুল চন্দ্র কবিরাজ বলেন, জমিসহ ঘরের দলিল হস্তান্তরে আরও ১০ দিন সময় লাগবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে ঘর নির্মাণ এবং দলিল তৈরির কাজ চলছে। ঘর নির্মাণে তেমন সমস্যা না থাকলেও দলিলের কাগজপত্র তৈরিতে সময় লাগছে বেশি। তবে আসপিয়ার জন্য সেসময় অনেক কমিয়ে আনা হয়েছে। আগামী ১০ দিনের মধ্যে জমিসহ ঘর আসপিয়াকে হস্তান্তর করা সম্ভব হবে। হিজলা থানার এসআই মো. মিজানুর রহমান বলেন, নিয়োগপত্র আসার সঙ্গে সঙ্গে আসপিয়াকে খবর দেওয়া হয়। খবর পেয়ে আসিপয়া থানায় এসে নিয়োগপত্র নিয়ে যান। তার চাকরি হওয়ায় আমরাও খুশি। বরিশাল সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি অধ্যাপক শাহ সাজেদা বলেন, আসপিয়ার চাকরি পাওয়া একটা উদাহরণ। ভবিষ্যতে যাতে এই ধরনের সমস্যায় কেউ না পড়ে, সে জন্য বিষয়টি আইনে পরিণত করার দাবি জানাই। প্রসঙ্গত, পুলিশ কনস্টেবল পদে সফলভাবে ছয়টি স্তর পার হওয়ার পর সবশেষ ২৯ নভেম্বর রাজারবাগ পুলিশ লাইন সেন্ট্রাল হাসপাতালে চূড়ান্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয় আসপিয়ার। সেখানেও উত্তীর্ণ হন। চূড়ান্ত নিয়োগের পূর্বে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আসপিয়া ও তার পরিবারকে ভূমিহীন উল্লেখ করা হয়। এতে চাকরির স্বপ্ন শেষ হয়ে যায় আসপিয়ার। ৮ ডিসেম্বর আসপিয়া বরিশালের ডিআইজির সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেও চাকরি না হওয়ায় বরিশাল পুলিশ লাইনসের সামনে বসে থাকেন। পরে আসপিয়াকে নিয়ে বাংলা ট্রিবিউনে সংবাদ প্রকাশ হয়। তার পাশে দাঁড়ান সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তি থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্তরের মানুষ। এমন খবরের পরিপ্রেক্ষিতে আসপিয়া যাতে কনস্টেবল পদে চাকরি পেতে পারেন, এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া ফোন করে বরিশাল জেলা প্রশাসককে জমিসহ ঘর দিতে বলেন। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে রয়েছে বলেও তিনি অবহিত করেন জেলা প্রশাসককে।