দুই-একটি পরিবারের জন্য মানুষ নারায়ণগঞ্জকে জেলখানা মনে করে : আইভী
প্রকাশিত: ২৫ অক্টোবর ২০১৯
রাসেল আদিত্য (যুগের চিন্তা ২৪) : দুই-একটি পরিবারের জন্য দেশের মানুষ নারায়ণগঞ্জকে জেলখানা মনে করে বলে মন্তব্য করেছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা.সেলিনা হায়াৎ আইভী।
শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) বিকেল ৪টায় ঢাকার জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীর ২৫তম জন্মদিন উপলক্ষে ‘জাতীয় ত্বকী চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতা ১৯’-এর পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এই মন্তব্য করেন। সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চ এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
নারায়ণগঞ্জ একটু ব্যতিক্রম উল্লেখ করে মেয়র আইভী বলেন, এটি মোঘল আমলের রাজধানী ছিল। বর্তমানে এটি শিল্প ও বন্দর নগরী। এখানে প্রচুর শিল্প, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড হয়। এক সময় আবহানী, মোহামেডানের মাঠ কাঁপাতেন নারায়ণগঞ্জের খেলোয়াররা।
ত্বকী হত্যার বিচার প্রসঙ্গে আইভী বলেন, নারায়ণগঞ্জবাসীর পাশাপশি সারা দেশের মানুষ জানে আমরা ত্বকী হত্যার বিচার চাচ্ছি। কিন্তু এর বিচার হচ্ছেনা এবং দেশের ৯০ ভাগ মানুষের ধারণা এ বিচার হবেনা। আমার বিশ্বাস এই হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে। বঙ্গবন্ধু হত্যার ৩৫ বছর পর বিচার হয়েছে। নারায়গঞ্জের সাত খুনের বিচার হয়েছে, গতকালকে নুসরাত হত্যার বিচার হরয়ছে। ত্বকী হত্যার বিচাও হবে। ত্বকীর আগে নারায়ণগঞ্জে অনেক হত্যা হয়েছে কিন্তু এর প্রতিবাদ হয়নি। ত্বকীর বাবা সাহস করে এর প্রতিবাদ করছে। এ হত্যার বিচার হবে।
তিনি আরও বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে সুফিজম বিশ্বাস করি, মানব ধর্ম এবং মানবতা বিশ্বাস করি। আমি মনে করি ত্বকী হত্যার বিচার আধ্যাত্মিকভাবে হবে এবং হওয়া শুরু হয়ে গেছে। অনেক হত্যার বিচার হচ্ছে। আমরা চাই ত্বকী হত্যার বিচার করে রাষ্ট্র একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করুক।
নিহত ত্বকীর পিতা ও সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহবায়ক রফিউর রাব্বি বলেন, পঞ্চম বারের মতো আয়োজিত এই প্রতিযোগিতায় দেশের শিশু কিশোরদের ছবি আঁকা ও লেখনির মাধ্যমে আমরা জেনেছি তারা আমাদের দেশকে সমাজকে কীভাবে দেখতে চায়। আমাদের রাষ্ট্র স্বাধীন হয়েছে কিন্তু আমাদের দেশের মানুষ প্রকৃত স্বাধীনতা পায়নি। আমাদের বিচার ব্যবস্থা, গণমাধ্যম এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এখনও পুরোপুরি স্বাধীন নয়।
তিনি আরও বলেন, আমরা দেখেছি ছয় মাসের মধ্যে অনেক হত্যার বিচার হয় আবার সাত বছরেও ত্বকী হত্যার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়নি। রাষ্ট্রের পরিচালক যারা রয়েছেন তারা যেভাবে ইচ্ছা করেন সেভাবে বিচার হয়। দেশের এমন কী সারা বিশ্বের কোন অপরাধের বিচার থামিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। এই বিচাহীনতার ধারাবাহিকতার বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জে যেমন প্রতিবাদ করছে তেমনি সারা দেশের মানুষের মধ্যে জাগরণ তৈরি হয়েছে। আমদের এই প্রতিযোগিতার উদ্দেশ্য হচ্ছে শিশু কিশোরদের সৃজনশীল কাজের মধ্যে যুক্ত রাখা।
জাতীয় অধ্যাপক ড.আনিসুজ্জামান বলেন, ত্বকী অশেষ সম্ভাবনার প্রতীক। আমরা ত্বকী হত্যার বিচার দাবি করছি শুধুমাত্র ত্বকীর পরিবার বা তার স্বজনদের জন্য নয়, এর সাথে রাষ্ট্রের সাফল্য ব্যর্থতার প্রশ্ন জড়িত। আমরা আমাদের দেশকে ব্যর্থ হতে দিতে পারি না।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দাবি ত্বকী হত্যার বিচার। এতদিনে সে দাবি পূরণ হয়নি সেটি একটি আক্ষেপের ব্যপার। কিন্তু আমরা হাল ছেড়ে দেবনা আমরা বিচারের দাবি সব সময় করবো। এ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আমরা সারা দেশের প্রতিভাবান ছেলে মেয়েদের নিয়ে আসার চেষ্টা করছি। তারা তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী বিচারের দাবি জানাবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ত্বকী হত্যার বিচার কেন হচ্ছেনা কারণ এখানে হস্তক্ষেপ আছে। ত্বকীর কৈশোরে মধ্যেই অনেক সম্ভাবনা ছিল, তার অনেক প্রতিভা ছিল। আমাদের দেশে নিরাপত্তার যে অভাব আছে, ত্বকী যতই বড় হতো কিংবা ধরা যাক বুয়েটে পড়তে আসতো তাহলে দেশ নিয়ে কোন মন্তব্য করেও সে নিহত হতে পারতো। যেমনটা আমাদের দেশে কিছুদিন আগে হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের সাংসদ শামীম ওসমানের একটি উদ্বৃতি উল্লেখ করে তিনি বলেন, বুয়েটে আবরার হত্যার পর দেখলাম তিনি বক্তব্য দিয়েছেন দুঃখ প্রকাশ করেছেন। কৌতুহলী হয়ে পড়ে দেখলাম সে আবরার এবং তার পরিবারের জন্য যতটা না দুঃখ প্রকাশ করেছে, তার চেয়ে বেশি দুঃখ প্রকাশ করেছে হত্যাকারী বিশজন ছেলের জন্য, তাদের ফাঁসি হবে এই ভেবে।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে বর্তমানে কেনো কিশোর আন্দোলন নেই। আমাদের দেশের এবং সমাজের পরিবর্তন হওয়ার জন্য আরেকটি কিশোর আন্দোলন হওয়া দরকার। এক সময় আমাদের দেশে মুকুল ফৌজ, খেলাঘর এবং কচিকাঁচার মেলা ছিল। এসব সংগঠনের সদস্যরা দেশের আন্দোলন সংগ্রামে তখনকার সময় ভূমিকা রেখেছে। সমাজ পরিবর্তনে, দেশ পরিবর্তনে ভূমিকা রেখেছে। বর্তমানে খেলাঘর ভেঙ্গে তিন ভাগ হয়ে গেছে এবং এগুলোর এখন উপযোগিতা নেই।
বিশিষ্ট রবীন্দ্র গবেষক অধ্যাপক ড. হায়াৎ মাহমুদ বলেন, যে কারণে আমরা এখানে মিলিত হয়েছি তা অত্যন্ত বেদনার। ত্বকীকে চলে যেতে হলো ত্বকীর জন্য নয়, তার বাবাকে শাস্তি দেওয়া জন্য পুত্রকে হত্য করা হয়েছে। তার বাবাকে জ্বলে পুড়ে মারার জন্য তাকে হত্যা করা হয়েছে, এমন ভয়ংকর কারণ ভাবা যায়না।
লেখক ও গবেষক অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ত্বকীকে নিয়ে বই প্রকাশিত হয়েছে। পত্র-পত্রিকায় লেখা প্রকাশিত হয়েছে। যদি আমদের শিক্ষার ভিতে আলো ছড়ানোর ব্যবস্থা না থাকে তাহলে এসব হত্যার বিচার হয়না। একটি হত্যা হলে আরও অনেক হত্য হয়। সাংবিধানিকভাবে কেন এর বিচার হবেনা ? বিচার ব্যবস্থা একটি স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা। কিন্তু আমরা দেখছি এখন প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ছাড়া কোনো বিচার হচ্ছেনা।
ত্বকীরে পরিবারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, সন্তান হারানের বেদনা কোনোদিন মুছে যাওয়ার নয়, তারপরও আমরা সমবেদনা জানাচ্ছি। দেশের সমস্ত মানুষ আপনাদের পাশে।
সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের সদস্য সচিব কবি ও সাংবাদিক হালিম আজাদ বলেন, ত্বকীকে হত্যা করার মধ্য দিয়ে বিশাল একটি পর্বকে হত্যা করা হয়েছে। ত্বকীকে হত্যা করা হয়েছে তার বাবাকে, পরিবারকে শাস্তি দেওয়ার জন্য। এখন হয়তো ত্বকী আমাদের মাঝে নেই।তাকে হত্যা করে লাখ লাখ ত্বকীকে উজ্জীবিত করা হয়েছে। একটি ত্বকী হাজার হাজার প্রতীক হয়ে উঠেছে। সে সবার প্রতিনিধিত্ব করছে। ত্বকী হত্যার বিচার একদিন হবেই হবে।
সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক ও নিহত ত্বকীর পিতা রফিউর রাব্বির সভাপতিত্বে এবং নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ভবানী শংকর রায়ের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি ও অনুষ্ঠান উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক জাহিদুল হক দীপু। এছাড়া কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য গ-বিভাগে ‘ত্বকীকে নিয়ে রচনা’ বিষয়ে এবারে ত্বকী পদকপ্রাপ্ত কুড়িগ্রামের দিল্লুর রহমান তার অনুভূতি ব্যক্ত করেন। এর আগে অনুষ্ঠানের শুরুতে ত্বকীকে নিয়ে একটি ওয়েবসাইটের উদ্বোধন করেন জাতীয় অধ্যাপক ড.আনিসুজ্জামান। এ সময় ত্বকীর ওয়েবসাইট থেকে একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন-নিহত ত্বকীর মা রওনক রেহানা, ছোট ভাই রাকিব মুহাম্মদ সাকি, খেলাঘর জেলা কমিটির সভাপতি রথীন চক্রবর্তী, নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান, বাসদ নারায়ণগঞ্জ জেলা সমন্বয়ক নিখিল দাস, ন্যাপ নারায়ণগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক এড. আওলাদ হোসেন, গণসংহতি আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ জেলার সমন্বয়ক তারিকুল সুজন, বাংলাদশ মহিলা পরিষদের নারায়ণগঞ্জ জেলা সভাপতি লক্ষ্মী চক্রবর্তী, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি জিয়াউল ইসলাম কাজল, প্রদীপ ঘোষ বাবু, সহসভাপতি ধীমান সাহা জুয়েল, সাবেক সহসভাপতি ফামিদা আজাদ, সাধারণ সম্পাদক শাহীন মাহমুদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনি সুপান্থ, অমল আকাশ, আনন্দ ধারার সাধারণ সম্পাদক ইয়াহিয়া আরজু, সমগীতের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি দীনা তাজরিন, স্বরধ্বনির প্রতিষ্ঠাতা আহম্মেদ বাবলু, চলচ্চিত্র নির্মাতা হাসান জাফরুল বিপুল, শহুরে গায়েনের রওনক ইব্রাহিম, শাহেন শাহ অর্ক প্রমুখ।
বক্তব্য শেষে আতিথিরা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন। এ প্রতিযোগিতায় সারাদেশ থেকে চিত্রাঙ্কনে সাড়ে সাত’শ এবং রচনায় তিন’শ প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করে। চিত্রাঙ্কন ও রচনার প্রতিটি বিষয়ে তিনটি বিভাগে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিটির প্রথম স্থান অধিকারিদেরকে ‘ত্বকী পদক’ প্রদান করা হয়।
দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারিদেরকে বিশেষ ক্রেস্ট, বই ও সনদ প্রদান করা হয় এবং সেরা দশ জন প্রতিযোগীকে ক্রেস্ট, বই ও সনদ প্রদান করা হয়। উভয় বিষয়ের প্রতিটি বিভাগের সেরা দশ জনের ছবি ও লেখা নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে একটি সুশোভিত স্মারক “ত্বকী”।
এবারে ত্বকী পদক প্রাপ্ত ৬ জন হলেন-চিত্রাঙ্কনে শিশু থেকে ৩য় শ্রেণি পর্যন্ত ক-বিভাগে নুহান আব্দুল্লাহ (ঢাকা), ৪র্থ থেকে ৬ষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত খ-বিভাগে আল মাউন (ঢাকা), ৭ম থেকে ১০ শ্রেণি পর্যন্ত গ-বিভাগে ঐশ্বর্য সুজানা (নারায়ণগঞ্জ)।রচনা প্রতিযোগিতায় ৫ম থেকে ৭ম শ্রেণি পর্যন্ত ক-বিভাগে ‘যেমন স্কুল আমার পছন্দ’ বিষয়ে মীর ফারদীন রহমান লাবিব (ঢাকা), ৮ম থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত খ-বিভাগে ‘প্রিয় খেলা, মাঠে নাকি মুঠোফোনে’ বিষয়ে নাজাহা ইজদিহার আমাতুল্লাহ (ঢাকা), কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য গ-বিভাগে ‘ত্বকীকে নিয়ে রচনা’ বিষয়ে দিল্লুর রহমান (কুড়িগ্রাম)।
বিচারকার্য পরিচালনা করেছেন, চিত্রাঙ্কনে রফিকুন নবী, জাহিদ মুস্তাফা ও অশোক কর্মকার; রচনায় ড. হায়াৎ মামুদ, ড.সফিউদ্দিন আহমদ ও ফিরোজ আহমেদ।
- এসপি হারুনকে সরানোর নেপথ্যে চাঁদাবাজির অভিযোগ
- নারায়ণগঞ্জের লজ্জা ঢাকলেন শামীম ওসমান
- সমাবেশ করার অনুমতি চায়নি শামীম ওসমান
- শামীম ওসমানের শঙ্কা ছিলো ভিকিকে ক্রসফায়ার দেয়া হতে পারে
- ডা.শাহনেওয়াজ, তাঁর স্ত্রী, মেয়ে, জামাতা করোনায় আক্রান্ত
- কাকে ভয় দেখালেন শামীম ওসমান
- ৫ ইউনিয়নকে নাসিকে যুক্ত করা হচ্ছে : মেয়র আইভী
- জাপা নেতা পিজা শামীমকে মারধর করলেন সেলিম ওসমান (অডিওসহ)
- যুগান্তরের প্রার্থী তালিকা ভিত্তিহীন : গণপূর্তমন্ত্রী
- মে মাসে না’গঞ্জের পরিস্থিতি হবে ভয়াবহ !
- ছাত্রজীবনের সেই তিনজনেই এখন এমপি, ডিসি, এসপি (ভিডিও)
- ‘গাইড বই’ চালাতে স্কুলে স্কুলে ঘুষ!
- পুরোনো রূপে ফিরছে নারায়ণগঞ্জ
- কেন্দ্রে যাচ্ছেন আইভী
- করোনায় আক্রান্ত দুই সহোদর থাকেন না’গঞ্জ, বাড়ি মুন্সিগঞ্জ