বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

১ মে শ্রমিকের অধিকার আদায়ের দিন

প্রকাশিত: ৩০ এপ্রিল ২০২০  

১ মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। এই দিন টি শ্রমিক শ্রেণির অধিকার আদায়ের এক ঐতিহাসিক লড়াই সংগ্রামের গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। ১৮৮৬ সালের মে মাসে আমেরিকার শিকাগো শহরে শ্রমিকরা ৮ ঘণ্টা কর্মদিবস, ন্যায্য মজুরি ও অধিকারের দাবিতে রক্তক্ষয়ী ও আত্মত্যাগী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সেদিন শ্রমিক শ্রেণির বিজয় ছিনিয়ে এনেছিলো। সেই থেকে সারা দুনিয়ায় ১ মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবে যথাযথ মর্যাদায় উদযাপিত হয়ে আসছে।

 

বাংলাদেশেও সভা-সমাবেশ ও মিছিল সহ নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শ্রমিক মেহনতি মানুষ এই দিনটি উদযাপন করে। তবে এবার করোনা দুর্যোগের কারণে নারায়ণগঞ্জসহ সারা দেশে মে দিবস উদযাপন একটু ভিন্ন আঙ্গিকে হবে। শ্রমিকরা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে স্বল্প পরিসরে কারখানার সামনে বা রাস্তার মোরে কিংবা হল রুমে অথবা প্রত্যেকে নিজের অবস্থান থেকে ১ মিনিট নিরবতা পালন করে ১ মে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবে। 

 

মে দিবসের যে মর্ম বাণী ও চেতনা তা উপলব্ধিতে নিয়ে শোষকদের অন্যায়-অত্যাচার-নির্যাতন ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে। নিজেদের দাবিদাওয়া তুলে ধরবে ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় সংগ্রাম গড়ে তুলার শপথ নিবে। কেননা যে লক্ষ্য নিয়ে মে দিবস ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল তা আজও আমাদের দেশের শ্রমিকরা অর্জন করতে পারেনি। মে দিবসের ১৩৪ বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও এদেশের শ্রমিকরা মে দিবসের সুফল পায়নি। তারা আজও ৮ ঘন্টা কাজ, ন্যয্য মজুরি ও অধিকার বঞ্চিত, শোষিত-নির্যাতিত এবং অগণতান্ত্রিক কালাকানুনের বেড়াজালে আটকা পড়ে রয়েছে।

বাংলদেশ পূর্বে পাকিস্তান সময়ে ২২ পরিবারের শোষণের বিরুদ্ধে বাঙালীরা সংগ্রাম করেছে মুক্তিযুদ্ধ করে এ দেশ স্বাধীন করেছে। আর এখন স্বাধীন দেশের মালিকরা স্বাধীন ভাবে এদেশের শ্রমিকদের শোষণ-নির্যাতন করে চলেছে। শ্রমিকদের কম মজুরি দিয়ে সস্তা শ্রমের উপর দাঁড়িয়ে তারা দেশে-বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলছে অথচ শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে কোন ভূমিকা রাখেনি। শ্রমিকদের শ্রমের ন্যায্য মজুরি, অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার, কর্মক্ষেত্রে জীবনের নিরাপত্তা, বাসস্থান, রেশন ও সামাজিক নিরাপত্তাসহ কোন সুযোগ সুবিধা তারা দেয়নি। 

 

পাকিস্তান সময়ের শোষকদের যে কারখানা ছিলো আদমজী জোট মিল, লতিফ বাওয়ানী জোট মিল এসব কারখানায়ও তখন শ্রমিকদের জন্য কলোনী ছিলো, হাসপাতাল ছিলো, শ্রমিকদের রেশন দেওয়া হতো, শ্রমিকের সন্তানের লেখা-পড়ার জন্য স্কুল-কলেজ ছিলো, বিনোদন কেন্দ্র ও খেলার মাঠ ছিলো। সেই সব সুবিধা থেকে এখন স্বাধীন দেশের গার্মেন্ট মালিকরা শ্রমিকদের বঞ্চিত করছে। শুধু তাই নয় বৈশ্বিক মহামারি করোনা দুর্যোগের মধ্যেও মালিকরা শ্রমিকদের দায়িত্ব নেওয়ার পরিবর্তে ছাঁটাই-বরখাস্ত ও কারখানা লে-অফ করে দিয়ে তাদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে। শ্রমিকদের সুসংগঠিত শক্তি প্রদর্শন তথা বিপ্লবী ধারার শ্রমিক আন্দোলন গড়ে তুলা ছাড়া শ্রমিক শ্রেণিকে শোষণ-নির্যাতন থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়। পূঁজিবাদী ধনীক শ্রেণির শাসন ব্যবস্থা শ্রমিক আন্দোলনকে ধ্বংস ও বিপথে পরিচালিত করতে চায়। পূঁজিবাদের এই হিংস্রতম কৌশলী আক্রমণের বিরুদ্ধে শ্রমিক শ্রেণিকে রুখে দাঁড়াতে এবং এই বিশাল শক্তিকে মোকাবেলা করতে শ্রমিকের ঐক্য ও শক্তিশালী সংগঠন গড়ে তুলতে হবে।

 

এম এ শাহীন
লেখক : সভাপতি- গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, নারায়ণগঞ্জ। 
মোবাইল : ০১৭২০১৫৮০৬২

এই বিভাগের আরো খবর