বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

১৮ ডিসেম্বর ভোট    

প্রকাশিত: ২৪ অক্টোবর ২০১৮  

ডেস্ক রিপোর্ট (যুগের চিন্তা ২৪) : আগামী ১৮ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এছাড়াও বিকল্প হিসেবে ২০ ও ৩০ ডিসেম্বর ভোটের সম্ভাব্য তারিখ রয়েছে ইসির ভাবনায়।

আগামী ১ নভেম্বর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতে তিনটি তারিখকে ভোটগ্রহণের সম্ভাব্য দিন নির্ধারণ করে একটি প্রস্তাব দেওয়া হবে। রাষ্ট্রপতির পরামর্শক্রমেই ভোটগ্রহণের চূড়ান্ত তারিখ ঠিক করবে নির্বাচন কমিশন। তবে ১৮ ডিসেম্বর ভোটের তারিখ নির্ধারণ করে আগামী ৪ নভেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

এ দিন জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। ভাষণে তিনি তফসিল ঘোষণা করবেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের জন্য গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) সংশোধনী এনে ভেটিংসাপেক্ষে বুধবার তা আইন মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে। সংসদের চলতি অধিবেশনের তা পাশ হবে। যদিও আরপিও’র কোন কোন ধারায় কি কি সংশোধনী চেয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি) তা স্পষ্ট করে বলছে না।


ইসি সূত্রে জানা গেছে, জাতির উদ্দেশে সিইসির ভাষণের জন্য কমিশন সচিবের দফতর থেকে একটি চিঠি বাংলাদেশ টেলিভিশনকে (বিটিভি) পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন জানিয়ে ৪ নভেম্বরের তারিখটি নির্ধারণ করে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

ওই ভাষণের মাধ্যমে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। ইসি ভবনে আগামী ৩ নভেম্বর এই ভাষণ রেকর্ডের সার্বিক প্রস্তুতি নেয়া হবে। ইসি সূত্রে আরো জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদের তফসিল ঘোষণা করার জন্য বিটিভিতে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে।

এ উপলক্ষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) খান মো নূরুল হুদা জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন; যার প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সরকারি ওই সম্প্রচার প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেয়া হয়েছে। ওই ভাষণের মাধ্যমে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সম্ভাবনা বেশি বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

কারণ দশম জাতীয় সংসদের তফসিল ওই প্রক্রিয়ায় ঘোষণা করা হয়েছিল। এ বিষয়ে বিটিভির মহাপরিচালক (ডিজি) এস এম হারুন উর রশীদ বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে কমিশন থেকে একটি চিঠি পেয়েছি। কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী কাজ করা হবে।


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রথমে ২৭ ডিসেম্বর করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু অর্থমন্ত্রী আগাম এই তথ্য বলে দেওয়ায় দু-একদিন আগ-পিছ করে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমশ ঘনীভূত হতে থাকলে সরকার সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণের সময় এগিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয়।

এ কারণে ভোটগ্রহণের সময় কিছুটা এগিয়ে এনে ১৮ ডিসেম্বর করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কারণ দেশের স্বাধীনতার সঙ্গে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের দিনটি বিশেষভাবে জড়িত। এটি বাঙালির বিজয় অর্জনের দিন। যার সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মুক্তিযোদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত।

তাই ভোটারদের আকৃষ্ট করতে বিশেষ ওই দিনের পর দিন ভোটগ্রহণের সময় নির্ধারণ করে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর আগে আগামী ১ নভেম্বর বিকেল ৪ টায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন সিইসি ও অপর সকল নির্বাচন কমিশনার। সাক্ষাতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে অবহিত করবেন নির্বাচন কমিশন।

ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা থেকে ভোট নেওয়া পর্যন্ত সাধারণত ৪০-৫০ দিন সময় হাতে রেখে তারিখ নির্ধারণ করা হয়। এক্ষেত্রে মনোনয়নপত্র দাখিল ১০-১২ দিন, যাচাই-বাছাই চার দিন, প্রত্যাহারের সময় সাত দিন এবং প্রচারণার জন্য ২০-২১ দিন সময় দেয় ইসি।

আইন বা বিধিতে তফসিল থেকে ভোট নেওয়ার মধ্যে কতদিনের পার্থক্য থাকবে, সেটা স্পষ্ট করে কিছু বলা নেই। তবে প্রার্থীদের প্রচারণার জন্য ন্যূনতম ১৫ দিন দেওয়ার কথা রয়েছে। এছাড়া প্রার্থীরা যাতে সব প্রস্তুতি রেখে মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেন এবং মনোনয়নপত্র বাতিল হলে আপিল করতে পারেন সেটি বিবেচনা করে একটা যৌক্তিক সময় দেওয়া হয়।

গত দশম নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, নবম সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৭৮ দিন আগে ২০১৩ সালের ১৮ নভেম্বর শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন নির্বাচনকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়। মেয়াদ শেষের ৯০ দিন আগে ওই দায়িত্ব নেওয়ার কথা থাকলেও ওই সময়ের বিরোধীদলকে সরকারে অন্তর্ভুক্ত করতে দেনদরবারে কিছু সময় দেরি হয়।

পরে অবশ্য বিএনপি না এলে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী অন্য দলগুলোকে ওই সরকারে স্থান দেওয়া হয়। ওই সরকার দায়িত্ব নেওয়ার সপ্তাহখানেক পর ২৫ নভেম্বর কমিশন দশম সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে।

এ ছাড়া বিগত কয়েকটি সংসদ নির্বাচন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, তফসিল ঘোষণা থেকে ভোট নেওয়া পর্যন্ত ৪০ দিনের বেশি ও ৫০ দিনের কম সময়ের ব্যবধান রাখা হয়েছে। দশম সংসদ নির্বাচনে ৫ জানুয়ারি ২০১৪ ভোট নেওয়ার দিন ঠিক করে তফসিল ঘোষণা হয় আগের বছরের ২৫ নভেম্বর। এই হিসাবে তফসিল ঘোষণা থেকে ভোট নেওয়ায় ব্যবধান ছিল ৪২ দিন।

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর ভোট নেওয়ার দিন ঠিক করে তারও আগে ২৩ নভেম্বর যে তফসিল দেওয়া হয় তাতে ব্যবধান ছিল ৪৭ দিন। এর আগে পঞ্চম থেকে অষ্টম সংসদেও ৪২ থেকে ৪৭ দিনের মধ্যে ব্যবধান দেখা গেছে। অবশ্য প্রথম সংসদ নির্বাচনসহ শুরুর দিকে কয়েকটি ৬০ থেকে ৭০ দিনের মতো সময় দেওয়ার রেকর্ড রয়েছে।

সংবিধান অনুযায়ী আগামী ৩০ অক্টোবর থেকে ২৮ জানুয়ারির মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দশম সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ২০১৪ সালের ২৯ জানুয়ারি দশম সংসদের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

সেই হিসেবে আগামী বছরের ২৮ জানুয়ারির পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইসির সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাধারণত তফসিল ঘোষণার পর ৪৫ দিন সময় রেখে সংসদের ভোটের দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হয়। এই হিসাবে নভেম্বরের প্রথমভাগে তফসিল ঘোষণা করে ডিসেম্বরের শেষভাগে ভোট হবে।

একাদশ সংসদ নির্বাচনে ১০ কোটি ৪৩ লাখেরও বেশি ভোটার থাকবে। গত দশম সংসদ নির্বাচনের চেয়ে এবার এক কোটি ২০ লাখ ভোটার বেড়েছে। একাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য সম্ভাব্য বাজেট রয়েছে ৬৭৫ কোটি টাকা।

এর মধ্যে নির্বাচন পরিচালনার চেয়ে আড়াই-তিনগুণ ব্যয় হবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায়। ছবিসহ ভোটার তালিকার পর নবম সংসদ নির্বাচনে ৮ কোটি ১০ লাখ ও দশম সংসদ নির্বাচনে ৯ কোটি ১৯ লাখ ভোটার ছিলেন।


(তথ্য সূত্র : ভোরের ডাক)
 

এই বিভাগের আরো খবর