বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

শামীম ওসমানের হাতছাড়া সোনারগাঁ

প্রকাশিত: ২৩ আগস্ট ২০১৯  

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্বের অবসান ঘটিয়ে আবারও একই পতাকাতলে মিলিত হয়েছেন সাবেক সাংসদ আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত ও সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম। সূত্র জানিয়েছে, গত ১৫ দিনে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে বেশ কয়েকটি গোপন বৈঠকে মিলিত হয়েছেন তারা। এসময় নারায়ণগঞ্জের বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতাও উপস্থিত ছিলেন।

 

এতোদিন এটি নিয়ে নানা গোমড় থাকলেও সব খোলাশা হয়ে যায় ২২ আগস্ট। এদিন কায়সার হাসনাত ও কালাম দুজনই ঐক্যবদ্ধভাবে বারদীতে হাজারখানেক লোকের এক পথসভায় যোগ দেন। বিকেল ৩টা থেকে দুজন ঐক্যবদ্ধভাবে ১০০ মাইক্রো ও হায়েস গাড়িভর্তি নেতাকর্মী নিয়ে কাঁচপুর, জামপুর, সাদিপুর, নোঁয়াগাও, বারদী, বৈদ্যেরবাজার ঘুরে রাতে পৌরসভায় গিয়ে এই পথসভা শেষ করেন। 

 

আগামী ২৪ আগস্ট ঐক্যবদ্ধভাবে মোগড়াপাড়া চৌরাস্তায় একটি শোকসভা আয়োজন করতেই এই পথসভা বলে নিশ্চিত করেছেন কায়সার হাসনাত ও কালাম। তাদের মধ্যকার অতীতের ১০ বছরের দ্বন্দ্ব মিটমাট হয়ে যাওয়ায় শামীম ওসমানের হাতছাড়া হয়ে গেলো সোনারগাঁ আওয়ামী লীগ। ধারণা করা হচ্ছে, ভবিষ্যতে কোন বহিরাগতদের ইশারায় নয়, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দই এখানকার আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দেবে।

 

সূত্র জানিয়েছে, ২০০৯ সালে নির্বাচনের আগে কায়সার হাসনাতের সঙ্গে রাজনৈতিকভাবে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন মাহফুজুর রহমান কালাম। বিভক্তির চরম আকার ধারণ করে কায়সার ও কালাম গ্রুপ। আওয়ামী লীগের এই বিভাজনের কারণে ২০১৪ সালে এই আসন থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জাতীয় পার্টির লিয়াকত হোসেন খোকা সাংসদ নির্বাচিত হন। সাংসদ হওয়ার পর থেকে সোনারগাঁ আওয়ামী লীগে নেমে আসে হতাশা, নেতাকর্মীরাও হয়ে পরে ছত্রভঙ্গ। 

 

২০১৯ সালের সংসদ নির্বাচনে কায়সার ও কালাম আলাদাভাবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে বঞ্চিত হন। ওই নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন পান খোকা। কায়সার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে পারেনি, ফলে সাংসদ নির্বাচিত হন খোকা। তবে এরপরও শামীম ওসমানের প্রতি আস্থা রাখেন কালাম। উপজেলা নির্বাচনেও শামীম ওসমানের উপর ভরসা রাখেন কালাম। তার ধারণা ছিলো নির্বাচনের শামীম ওসমানের কারিশমায় বিজয়ী হবেন তিনি। কিন্তু আদতে সেটি হয়নি। উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন কায়সার হাসনাতের চাচা মোশারফ হোসেন। এরপর থেকে কোনঠাসা হয়ে পড়েন উপজেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে কালাম। 

 

তবে গত ১৬ জুলাই কালামকে বাদ দিয়ে  সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি ভেঙে দিয়ে এড.শামসুল ইসলাম ভূঁইয়াকে আহবায়ক ও পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুমকে যুগ্ম আহবায়ক করে উপজেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক কমিটি ঘোষণা দেয়ার পর সাংগঠনিকভাবে আরও দুর্বল হয়ে পড়েন কালাম। এটি বুঝতে পেরেই কায়সারের মতোই আন্দোলন ও প্রতিবাদে নেমে পরেন তিনি। 

 

কায়সার হাসনাত আইভী ঘরনার রাজনীতিতে বিশ্বাসী। অপরদিকে কালাম ছিলেন শামীম ওসমানপন্থী। কিন্তু কালামকে বাদ দিয়ে আহবায়ক কমিটি করায় অস্তিত্বহীনতার সম্মুখীন হন তিনি। আর এতেই টনক নড়ে কালামের। তিনি বিষয়টি বুঝতে পেরে স্থানীয় কয়েকজন সিনিয়র আওয়ামী লীগ নেতার উপস্থিতিতে গোপন বৈঠকে ঐক্যবদ্ধ হন কায়সার হাসনাতের সাথে। যার ফলে কায়সার হাসনাত এবং মাহফুজুর রহমান কালাম দুইজনেই সেলিনা হায়াৎ আইভী ঘরনা রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হলেন।      


এবিষয়ে আব্দুল্লাহ আল কায়সার বলেন, ‘নিজেদের মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝির কারণে দীর্ঘদিন দ্বন্দ্ব ছিল। আমরা সব  ভেদাভেদ ভুলে সোনারগাঁ আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’


মাহফুজুর রহমান কালাম বলেন, ‘অনৈক্যের কারণে সোনারগাঁয়ে তৃতীয় শক্তি সুযোগ নিচ্ছে। অতীত ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সোনারগাঁ আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করব ইনশাআল্লাহ।’


এদিকে দীর্ঘ ১০ বছরের দ্বন্দ্বের অবসান ঘটিয়ে  কায়সার হাসনাত ও কালাম অবশেষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার ঘোষণায় উপজেলা চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ও এইচ এম মাসুদ দুলাল দুর্গেও চলছে আনন্দের ঘনঘটা। তৃণমূল আওয়ামী লীগেও বইছে ঐক্যের সুবাতাস।


অপরদিকে একটি সূত্র জানিয়েছে, শামীম ওসমানের ইশারায় পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুমকে দিয়ে ওই এলাকায় প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ ছিলো। জাতীয় পার্টির এমপি থাকায় এবং আওয়ামী লীগের কায়সার হাসনাত ও মাহফুজুর রহমান কালামের মধ্যকার দ্বন্দ্বে তৃণমূল আওয়ামী লীগ নেতারা ছিলো দ্বিখণ্ডিত অবস্থায়। 

 

কালাম দীর্ঘদিন শামীম ওসমানকে অনুসরণ করলেও শামীম ওসমান আস্থা রাখেন শামসুল ইসলাম ভূঁইয়া, ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুম ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ডা.আবু জাফর চৌধুরী বীরুর উপর। কায়সার হাসনাত ও কালামের এই ঐক্যের ফলে সোনারগাঁয়ে মাসুম ও বীরুর মাধ্যমে শামীম ওসমান কতখানি প্রভাব বিস্তার করতে পারবে তা সময়ই বলে দেবে বলে জানিয়েছে সূত্র।     

এই বিভাগের আরো খবর