শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

শক্তি রূপিনী দুর্গা

প্রকাশিত: ৪ অক্টোবর ২০১৯  

পঞ্চশক্তি সমন্বিতা দশভূজা দুর্গা। এই পঞ্চ শব্দটির সাথে সনাতনী আমরা অনেকেই পরিচিত। পঞ্চ ভূতের সাথে পঞ্চ শক্তির সমন্বয় সাধন হলে সর্ব সিদ্ধি লাভ সম্ভব। এ কারণেই মহাশক্তি রূপিনী দুর্গার কৃপা অবশম্ভাবি। কে এই দুর্গা? তাঁর সাথে অন্যান্য শক্তি কারা? মহাদেবী দুর্গা ঈশ্বরের মায়াশক্তি। তাঁর এই মায়া শক্তির প্রভাবেই জীবনিচয়  এ পৃথিবীতে ত্রিগুণে আকৃষ্ট হয়ে ত্রিতাপ দুঃখ ভোগ করছে।

 

গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, “ত্রিভিগুণ যয়ৈ ভাবৈ রেভিঃ সর্বমিদং জগৎ।” সত্ত্ব, রজ, তমো এই তিনগুণের দ্বারা আকৃষ্ট হয়ে হয়ে প্রাণিকুল জগতে মহিত রয়েছে, তাই তারা আমার অব্যয় তত্ত্ব জানতে পারে না। পঞ্চ শক্তির মহাশক্তি হচ্ছেন মহামায়া দুর্গা, ভগবান শ্রী হরির যোগমায়া স্বরূপা।

 

শ্রীমদ্ভাগবতে চতুর্থ স্কন্দে সতী দেবীর জন্মবৃত্তান্ত বর্ণিত হয়েছে। দক্ষের ষোল কন্যার মধ্য সর্ব কনিষ্ঠা সতী। মার্কণ্ড পূরাণে শ্রীশ্রী চণ্ডী গ্রন্থে মহিষাপুর বধ করে দেবী স্বর্গের দেবগণের দুর্দশা মুক্ত করেন। স্কন্দ পুরাণের কাশি খণ্ডে দুর্গ নামে অসুর বধ করেন। দ্বাপর যুগে যশোদা গর্ভে আবির্ভাব হয় যোগমায়া দেবী। তিনি অষ্টভূজা দুর্গা রূপে কংসের মৃত্যুর ভবিষ্যৎ বাণী করেন।

 

শক্তিরূপিনী মহামায়ার প্রভাব থেকে মুক্তি পেতে মহা ভক্তির প্রয়োজন। স্বাতিকতার আজ বড়ই অভাব। রজ গুণ ও তমো গুণের প্রভাবে আমরা আমাদের সকল শক্তি হারা হয়ে পড়ি। মা দুর্গার কাঠামতত্ত্বে আমরা কি দেখতে পাই? জ্ঞান শক্তি সরস্বতী, ধন শক্তি লক্ষ্মী, বীজ শক্তি কার্তিক আর রয়েছে সর্বকর্মের সিদ্ধি দাতা শ্রীশ্রী গণেশ। এই পঞ্চশক্তির সমন্বয়ে সর্ব কার্য সিদ্ধি লাভ হয়। এ জাগতিক সংসারে তাকালে আমরা অর্থমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, খাদ্যমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ প্রধানমন্ত্রীর কার্যক্রমকে দেখতে পাই। সবাই আমাদের মঙ্গলের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।

 

পরাধীন দেশের মুক্তি কামনায় ভারতবাসী রাজা কংস নারায়ণ প্রথম তাহেরপুর এই শক্তির পূজা করেন। দুর্গাপূজা রাজসিক পূজা।পুরাকালে রাজ রাজন্যবর্গ এ পূজা করতে। কালক্রমে এ পূজায় সবার ঐক্য প্রতিষ্ঠায় সার্বজনীনতা লাভ করে। বর্মমানে এ শক্তি পূজা সার্বজনীন জাতীয় উৎসবে রূপ নিয়েছে। শরণা গত দীপাতজনের পরিত্রাণ কারিনী এ শক্তি রূপিনী দুর্গা।

 

দুর্গার চরণে রূপগুণ সম্পন্ন সিংহ তাঁর মায়ের বা চরণে তম গুণের প্রতীক মহিষাসুর। শ্রীশ্রী গণেশের বাহণ হচ্ছে ইঁদুর। ইঁদুর অতি ক্ষুদ্র পানি। জল স্থল এমন-কি মাটির নীচ দিয়ে ও ইঁদুর চলাচল করতে পারে। ইঁদুর মহাবিপদেও ধৈর্য্য হারা হয় না। তারা যেকোন বাধার সম্মুখীন হলে ক্ষুদ্র দাঁত দিয়ে বন্ধন কেটে বন্দীদশা থেকে বেড়িয়ে আসতে পারে। তারাছাড়া ক্ষুদ্রদের রাজা হতে হলে বা নেতা হতে হলে তার বিরাট মাথা দশের লাটি একের বোঝা। জনগণের প্রতি তাই গণেশকে বলা হয় গণপতি সিদ্ধিদাতা গণেশ। 

 

দেবলোকের নিরাপত্তা বিধানে দেব সেনাপতি সরা নন কার্তিক। তার বাহন ময়ূর। দ্রুতগামী এবং সে স্থলচর জলচর এবং খেচর (আকাশচারি)। সুতীক্ষ্ণ দৃষ্টি সম্পন্ন হচ্ছে লক্ষ্মীর বাহন পেঁচা। ধন অর্জন এবং রক্ষণে সুতীক্ষ্ণ দৃষ্টি প্রয়োজন। আর জ্ঞান অর্জনে হংস অতুলনীয় পুত পবিত্র দেবী সরস্বতীর বাহন। শক্তি মানের সাথে শক্তি সংযোগ সর্বকাজে সিদ্ধি লাভের হচ্ছে মহাশক্তি রূপিনী দুর্গা।

 

রণজিৎ মোদক
লেখক : শিক্ষক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট  এবং সভাপতি-ফতুল্লা রিপোর্টার্স ক্লাব, নারায়ণগঞ্জ
মুঠোফোন : ০১৭১১ ৯৭ ৪৩ ৭২

এই বিভাগের আরো খবর