শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

রাত পোহালেই ত্যাগের ঈদ

প্রকাশিত: ১১ আগস্ট ২০১৯  

যুগের চিন্তা ২৪ : ঈদ মোবারক হো-/ঈদ মোবারক ঈদ মোবারক ঈদ, ঈদ মোবারক হো-/রাহেলিল্লাহকে আপনাকে বিলিয়ে দিল, কে হলো শহীদ/ যে কোরবানি আজ দিল খোদায় দৌলৎ ও হাশমত/যার নিজের ব'লে রইলো শুধু আল্লাহ ও হজরত/ যে রিক্ত হয়ে পেল আজি অমৃত তৌহিদ....বছর ঘুরে খুশির বারতা নিয়ে আবার এসেছে পবিত্র ঈদুল আজহা। ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে দেশের প্রতিটি মুসলমান আগামীকাল সোমবার পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন করবেন। 


এ উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ নগরীর লাখ লাখ মানুষ শেকড়ের টানে ইতিমধ্যেই ফিরে গেছেন শৈশবের চেনা জনপদ গ্রাম-গঞ্জে। আজ রোববার যাচ্ছেন আরও অনেকেই। মুসলমানদের দুটি প্রধান ধর্মীয় উৎসবের মধ্যে ঈদুল আজহা একাধিক কারণে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। এর মধ্যে অন্যতম হলো হালাল পশু কোরবানি করা এবং সামর্থ্যবানদের জন্য পবিত্র হজব্রত পালন করা।


হজব্রত পালন করতে সবাই সক্ষম না হলেও মহান আলস্নাহর অপার অনুগ্রহ লাভে ধন্য হতে পশু কোরবানির মাধ্যমে যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে মুসলিম সম্প্রদায় উদযাপন করবে অন্যতম প্রধান এই ধর্মীয় উৎসব। এ উপলক্ষে ঘরে ঘরে বয়ে যাবে আনন্দের ধারা। 


তবে ডেঙ্গুর দাপটে এবার অনেক পরিবারেই এ আনন্দ অনেকটা ম্লান হয়ে গেছে। বিশেষ করে যে সব পরিবারের এক বা একাধিক সদস্য এখনো আশঙ্কাজনক অবস্থায় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে, তাদের কাছে ঈদ যেন শোকের বার্তা বয়ে এনেছে। এছাড়া ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে যাদের আদরের সন্তান, ভাই-বোন কিংবা বাবা-মাসহ নিকটাত্মীয়-স্বজন মারা গেছে, তাদের পরিবারে এখন শোকের মাতম বইছে। ঈদের দিনক্ষণ যতই ঘনিয়ে আসছে, প্রিয়জন হারানোর ব্যথায় তাদের বুক যেন আরও ততই ভারী হয়ে উঠছে।


এদিকে, পবিত্র ঈদুল আজহার তাৎপর্য তুলে ধরে বরাবরের মতোই দেশের সংবাদপত্রগুলো প্রকাশ করছে বিশেষ সংখ্যা। বেতার থেকে সম্প্রচারিত হবে বিশেষ অনুষ্ঠান। অন্যদিকে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে ঈদ উপলক্ষে রয়েছে নানা রকম আনন্দ-আয়োজন। আগামীকাল সোমবার থেকে টানা প্রায় সপ্তাহখানেক ধরে চলবে ঈদের বিশেষ অনুষ্ঠানমালা।


ঈদ উপলক্ষে আজ রোববার থেকে ৩ দিনের সরকারি ছুটি শুরু হয়েছে। চাকরিজীবীদের কেউ কেউ ঈদ উদযাপনের জন্য ১৪ আগস্ট একদিনের অতিরিক্ত ছুটি নিয়েছেন। ফিরে আসবেন আগামী সপ্তাহে। সংবাদপত্র অফিসগুলোতেও ৩ দিনের ছুটি শুরু হচ্ছে আজ রোববার থেকে। ছুটি শেষ হবে মঙ্গলবার। এ কারণে আগামীকাল থেকে পরবর্তী ৩ দিন দেশের কোনো সংবাদপত্র প্রকাশিত হবে না। 


ঈদুল আজহা উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ জেলার সর্ববৃহৎ ঈদের জামাত কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ও ঈদগাহ সংলগ্ন সামসুজ্জোহা ক্রীড়া কমপ্লেক্সে একত্রিত করে সকাল ৮টায় অনুষ্ঠিত হবে। এতে লাখো মানুষ নামাজ আদায় করবে বলে আশা করা হচ্ছে। নগরীরর নূর মসজিদের ঈমাম আব্দুস সালাম এই জামাতের ঈমামতি করবেন।


জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ এ বিষয়ে বলেন, যেহেতু এটি বৃহত্তর জামাত তাই একটি জামাতই অনুষ্ঠিত হবে। এরপরও যদি জামাত পড়ার মতো মুসুল্লি থাকেন তাহলে দ্বিতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হবে।


প্রসঙ্গত, প্রায় চার হাজার বছর আগে আল্লহ পাকের সন্তুষ্টি লাভের জন্য হজরত ইব্রাহিম (আ.) নিজ পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু পরম করুণাময়ের অপার কুদরতে হজরত ইসমাইল (আ.)-এর পরিবর্তে একটি দুম্বা কোরবানি হয়ে যায়। 


হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর সেই ত্যাগের মহিমার কথা স্মরণ করে মুসলিম সম্প্রদায় জিলহজ মাসের ১০ তারিখে আলাল্লাহ পাকের অনুগ্রহ কামনায় পশু কোরবানি করে থাকে। আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান মুসলমানদের জন্য আল্লাহ কোরবানি ফরজ করে দিয়েছেন। তাই কোরবানি করাই এই দিনের উত্তম ইবাদত বলে ধর্মীয়ভাবে বলা হয়েছে।


সেই ত্যাগ ও আনুগত্যের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে সারা দেশের মুসলিম সম্প্রদায় কাল দিনের শুরুতেই ঈদগাহ বা মসজিদে সমবেত হবে ঈদুল আজহার দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায়ের জন্য। নামাজের খুতবায় খতিব তুলে ধরবেন কোরবানির তাৎপর্য। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাই একসঙ্গে নামাজ আদায়ের পর কোলাকুলি করে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। 


ঘুচে যাবে সব ভেদাভেদ। নামাজ শেষে মুসলিস্নদের অনেকেই যাবেন কবরস্থানে। চিরবিদায় নেয়া স্বজনদের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে সজল চোখে এই আনন্দের দিনে তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে আল্লাহর দরবারে আকুতি জানাবেন। এরপর বাড়ি ফিরে আল্লাহর উদ্দেশ্যে পশু কোরবানির মধ্য দিয়ে ঈদের প্রধান কর্তব্য সম্পন্ন হবে।


জিলহজ মাসের ১০ তারিখে ঈদুল আজহা উদযাপিত হলেও পরের দুই দিনও পশু কোরবানি করার বিধান রয়েছে। সামর্থ্যবান মুসলমানদের জন্য কোরবানি ফরজ হলেও ঈদের আনন্দ থেকে দরিদ্র-দুস্থরাও বঞ্চিত হবে না। কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রির সমুদয় অর্থ এবং কোরবানি দেয়া পশুর মাংসের তিন ভাগের একভাগ তাদের মধ্যে বণ্টন করে দেয়া হবে।


বস্তুত ঈদুল আজহা শুধুমাত্র পশু কোরবানির আনুষ্ঠানিকতাই নয়, এই ঈদ সমগ্র বিশ্বের মুসলমানদের ত্যাগ, আত্মসমর্পণ ও আত্মোপলব্ধির শিক্ষা দেয়। ঈদুল আজহার চেতনা মহান আল্লাহর ইচ্ছার কাছে নিজেকে সঁপে দেয়ার শিক্ষাও দেয়। ইসলামের দৃষ্টিতে ঈদুল আজহার দিনে হালাল পশু কোরবানি করা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ কাজ।


পবিত্র কুরআনে সূরা কাওসারে বলা হয়েছে, 'অতএব আপনার পালনকর্তার নামে নামাজ পড়ুন এবং কোরবানি করুন।' সূরা হজে বলা হয়েছে 'কোরবানি করা পশু মানুষের জন্য কল্যাণের নির্দেশনা।' কোরবানির পশু সম্পর্কে কুরআন মজিদে আরও বলা হয়েছে, 'এগুলোর গোশত বা রক্ত আমার কাছে পৌঁছায় না, কিন্তু তোমাদের তাকওয়া ঠিকই পৌঁছে যায়।' 


রাসূল (সাঃ)-এর হাদিসে বলা হয়েছে, 'ঈদুল আজহার দিন কোরবানির চেয়ে আর কোনো কাজ আল্লাহর কাছে অধিক পছন্দনীয় নয়।' অন্যত্র তিনি বলেছেন, 'যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকার পরও কোরবানি দিল না সে যেন ঈদগাহে না যায়।'


এদিকে প্রিয়জনদের সান্নিধ্যে ঈদের আনন্দ উদযাপন করতে বরাবরের মতোই নারয়ণগঞ্জ থেকে অগণিত মানুষ গ্রামের বাড়িতে যাত্রা শুরু করেছে। নগরীর বাস টার্মিনাল, রেলস্টেশন ও লঞ্চঘাটে ঘরমুখো মানুষের প্রচণ্ড ভিড়। 

এই বিভাগের আরো খবর