শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

বাড়তি দাম নিলেই জেল জরিমানা

প্রকাশিত: ২৩ মার্চ ২০২০  

বিশেষ প্রতিনিধি : প্রাণঘাতী ভাইরাস করোনা নিয়ে যখন সাধারণ মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত ঠিক সেই সময় এক শ্রেণির মুনাফারখোর অতিরিক্ত মূল্যে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিক্রি করছে। বেশ কয়েকদিন ধরে এই অবস্থা বিরাজ করছে নারায়ণগঞ্জের হাট-বাজারে। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। 

 

করোনার এই বিপদের মধ্যে যাতে কোনো অতিলোভী ব্যবসায়ী সাধারণ মানুষকে জিম্মি করতে না পারে সেই জন্যে মাঠে নেমেছে প্রশাসন। শনিবার থেকে  বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর পৃথক অভিযান পরিচালনা করেছে। এসব অভিযানে একাধিক ব্যবসায়ীকে জরিমানা করা হয়েছে। 

 

একই সাথে মাইকিং ন্যায্যমূল্যে আলু ও পেঁয়াজ বিক্রি করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। যেটি সাধারণ মানুষ ইতিবাচকভাবে নিয়েছে। পাশাপাশি মুনাফাখোররা কিছুটা হলেও ঘাবড়ে গেছে। করোনাভাইরাস আতঙ্কে সাধারণ মানুষ এক প্রকার দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এ কারণে নানান সময় গুজব ভর করছে তাদের ঘাড়ে। সবকিছু বন্ধ হয়ে যাবে-এমন গুজবে সাধারণ মানুষ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র  বেশি পরিমাণে কিনতে শুরু করেছে। বিশেষ করে চাল, আটা, চিনি, ডাল, তেল, পেঁয়াজ, রসুন, আলু, মসলা, মাছ, মাংসসহ একান্ত প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য কিনছে লাইন দিয়ে। 

 

সপ্তাহখানেক ধরে এই অবস্থা চলছে। আর এই সুযোগটি কাজে লাগাচ্ছে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। নারায়ণগঞ্জের গুরুত্বপূর্ণ বাজার বলে পরিচিত দ্বিগুবাবুর বাজার, কালীরবাজার ও বাবুরাইল বউ বাজারের ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপ করে জানাগেছে, মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে সবধরনের চাল কেজিতে ৪-৫ টাকা বেড়েছে। পেঁয়াজ বেড়েছে কেজিতে ১০-১৫ টাকা। ডাল ৭- ১০ টাকা, আটা ৪-৫ টাকা, চিনি ৫-৭ টাকা, আলু ৪-৬ টাকা, রসুন ১০-১৫ টাকা বেড়েছে। একইভাবে বেড়েছে মাছের দামও।

 

মিল মালিকরা বলছেন হঠাৎ করে চালের দাম বৃদ্ধির কোনো কারণ নেই। আর পাইকারি ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, চাহিদা বৃদ্ধির কারণে চালের দাম বেড়েছে। অন্যান্য পণ্যের ব্যবসায়ীদের বক্তব্যও একই রকম ছিল। কিন্তু ক্রেতারা তাদের বক্তব্য মানতে নারাজ। ক্রেতারা বলছেন, নিত্যপণ্যের দাম রাতারাতি আশঙ্কাজনকহারে বাড়তে পারে না। 

 

শনিবার দ্বিগুবাবুর বাজারে আসা আব্দুল মজিদ নামে একজন ক্রেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রাতারাতি এতো দাম বাড়তে পারে না। প্রশাসনিক নজরদারী দেরিতে হলেও শুরু হয়েছে। এটি অব্যাহত থাকলে অসাধু ব্যবসায়ীরা কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলে দাবি তার। 

 

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রেক্ষিতে শনিবার ভ্রাম্যমাণ আদালত ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর পৃথকভাবে অভিযানে নামে। শনিবার  দ্বিগুবাবুর বাজারের বিভিন্ন দোকানে  অভিযান চালান। এসময় অতিরিক্ত দাম নেয়া এবং মূল্য তালিকা না থাকার কারণে দোকান মালিককে জরিমানা করেন। 

 

এ সময় ব্যবসায়ীদের সতর্ক করা হয় ভ্রাম্যমাণ আদালতের পক্ষ থেকে। বলা হয় করোনার এই দুর্যোগের সময় কোনো ব্যবসায়ী যদি ক্রয়মূল্য থেকে অতিরিক্ত মুনাফা করেন তাহলে তাকে জেল জরিমানা করা হবে। 

 

অভিযানকালে দোকান মালিকদের বাধ্যতামূলকভাবে মূল্য তালিকা দৃশ্যমান স্থানে প্রদর্শন করার নির্দশ দেয়া হয়। এ সময় বাজারে থাকা সাধারণ মানুষের মধ্যে লিফলেট বিতরণ করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকালে উপস্থিত ছিলেন এমন একটি সূত্র জানিয়েছে, চাল ব্যবসায়ীরা ক্রয় রশিদ দেখাতে পারেননি। কারণ হিসেবে তারা চাল কেনার আড়ৎ থেকে পান না বলে জানান। প্রতিদিন শতাধিক ব্যবসায়ীর কাছে নগদ এবং বাকিতে চাল বিক্রি করার কারণে রশিদ দিতে পারেন না। 

এই বিভাগের আরো খবর