শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

নারায়ণগঞ্জে বার্ন ইউনিট নেই

প্রকাশিত: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০  

নুসরাত জাহান সুপ্তি : শিল্পাঞ্চল হিসেবে খ্যাত নারায়ণগঞ্জ অনেক ঘনবসতিপূর্ণ একটি জেলা। অর্ধকোটি জনসংখ্যার এই জেলায় হরহামেশাই ঘটছে অগ্নি দুর্ঘটনা। এসব দুর্ঘটনায় অগ্নিদগ্ধদের ক্ষুদ্র পরিসরে ৩০০ শয্যা ও ১০০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসা হলেও সম্পূর্ণ চিকিৎসা দিতে ঢাকার হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। স্পেশালাইজড বার্ন ইউনিট না থাকায় অগ্নিদগ্ধদের চিকিৎসা দেয়ায় অনেক জটিলতার সম্মুখীন হতে হয় বলে জানান ডাক্তাররা। 


পর্যাপ্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা না থাকায় চিকিৎসকরা রোগীদের ঢাকায় পাঠাবার নির্দেশনা দেন। তাই নারায়ণগঞ্জে আধুনিক বার্ন ইউনিট গড়ে তুললে অগ্নি দুর্ঘটনায় বাঁচবে বহু প্রাণ। সচেতন নাগরিক সমাজের দাবি, অবিলম্বে যাতে নারায়ণগঞ্জে একটা আধুনিক বার্ন ইউনিট গড়ে তোলা হয়। 

 

জেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের দেয়া তথ্যানুসারে, ২০১৯ সালে নারায়ণগঞ্জে ৪৯৫ টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ২০২০ সালের প্রথম মাসেই ৪২টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। নারায়ণগঞ্জ ফায়ারসার্ভিস কর্তৃক জানা যায়, এসকল ঘটনার মধ্যে ৯০ শতাংশ ঘটনার কারণ হিসেবে ৩টি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। চুলার আগুন, বৈদ্যুতিক গোলযোগ ও সিগারেটের টুকরো থেকেই অধিকাংশ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।

 

অগ্নিকাণ্ডের কিছু সময় অল্প ক্ষতিতেই সমাপ্ত হচ্ছে, আবার কিছু ঘটনা নির্মম ভয়াবহতার গল্প তৈরি করছে। চলতি বছরের ২ জানুয়ারি সিদ্ধিরগঞ্জের পাইনাদী সিআইখোলার একটি ফ্ল্যাট বাসায় চুলা থেকে জমা থাকা গ্যাসের আগুনে স্বামী-স্ত্রীসহ একই পরিবারের ৩ জন দগ্ধ হয়েছেন। দগ্ধরা হলেন- কবির হোসেন (৬৫), তার স্ত্রী রেখা বেগম (৫৫) ও মেয়ে সুফিয়া (২৮)। দগ্ধদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা দেওয়া হয়। 

 

গত ৭ জানুয়ারি ফতুল্লায় একটি বাড়িতে চুলার গ্যাস লাইনে লিকেজ থেকে গ্যাসের বিস্ফোরণ হয়ে আগুনে শরীফ ও ফরিদা নামে এক দম্পতি দগ্ধ হয়েছে।  এলাকাবাসী দগ্ধ স্বামী-স্ত্রীকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে শহরের ৩০০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়। গেলো বছরের ২৩ ডিসেম্বও সোনারগাঁয়ে শিশু সন্তানের খাবার তৈরি করতে গিয়ে আগুনে ঝলসে যান তাসলিমার নামে এক গৃহবধূ। তার শরীরের ১৬ শতাংশ ঝলসে গেছে। স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাসলিমাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরআগে গতবছরের ২২ নভেম্বর সদর উপজেলার ফতুল্লার মুসলিমনগর এলাকায় টিনের দুই তলা বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডে শম্পা আক্তার (২০) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়।

 

নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মেডিকেল অফিসার আমিত রায় এই বিষয়ে বলেন, ‘আমাদের এখানে দগ্ধ রোগী বেশি গুরুতর হলে আসলে তাদের ঢাকার হাসপাতালে পাঠানো হয়। এছাড়া রোগী কম পুড়লে তাকে সার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেওয়া হয়। তবে বিকালে বা রাতে আসলে রোগীদের ঢাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়।’

 

৩০০ শয্যা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ৩০০ শয্যা হাসপাতাল ৫০০ শয্যা হলে হাসপাতালে দগ্ধ রোগীর চিকিৎসার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা হবে।
নারায়ণগঞ্জ ১০০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক ডাক্তার (আরএমও) আসাদুজ্জামান বলেন, ‘জেনারেল হাসাপাতালে বার্ন ইউনিট নেই। কিন্তু দগ্ধ রোগীরা হাসপাতালে আসলে তাদের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হয়। রোগীর অবস্থা বেশি খারাপ হলে তাদের ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নিয়ে যেতে  নির্দেশ করা হয়।’ 

 

নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি এ বি সিদ্দিক বলেন, ‘জেলায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা দুই একদিন পরপর শুনছি। সেক্ষেত্রে মানুষের চিকিৎসা নিরাপত্তার জন্য নারায়ণগঞ্জে বার্ন ইউনিটের প্রয়োজন রয়েছে। আমরা ইতিমধ্যে ভেবেছি সিভিল সার্জনের কাছে আবেদন করব, জেলার দুইটি বড় সরকারি হাসপাতালের যে কোনো একটিতে দ্রুত একটি বার্ন ইউনিটের ব্যবস্থা করা হোক। যেন দগ্ধ রোগীরা এখানেই সেবা নিয়ে সুস্থ হতে পারে।’

 

এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা.মোহাম্মদ ইমতিয়াজ বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ ঢাকার নিকটবর্তী হওয়ায় দগ্ধ রোগীরা ঢাকায় সেবা গ্রহণ করতে পারে। তবে নারায়ণগঞ্জে একটি বার্ন ইউনিটের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।’

 

নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফীন বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা অহরহ ঘটছে। আর শীতের মৌসুমে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা অনেক বেড়ে যায়। তাই মানুষের জীবন নিরাপত্তায় জরুরিভাবে সেবার প্রয়োজন রয়েছে। নারায়ণগঞ্জে বার্ন ইউনিট হলে জেলার মানুষের অনেক সুবিধা হবে।’ 

 

সর্বশেষ গত ১৭ ফেব্রুয়ারি সদর উপজেলার ফতুল্লার সাহেবপাড়া এলাকায় একটি বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় একই পরিবারের ৮ জন দগ্ধ হয়েছেন। দগ্ধ ব্যক্তিরা হলেন- নুর জাহান বেগম (৬০), তার বড় ছেলে কিরণ (৪৩), কিরণের দুই ছেলে আবুল হোসেন (২৫), আপন (১১)। কিরণের ছোট ছেলে হিরণ (২৫), হিরণের স্ত্রী মুক্তা (২১), তাদের মেয়ে ইলমা (৩) ও কিরণ হিরণের ভাগিনা কাওসার (১৬)। তাদের মধ্যে নুর জাহান বেগম ও তার ছেলে কিরণ ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। 

এই বিভাগের আরো খবর