বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১১ ১৪৩১

ঠাঁই নেই লাশকাটা ঘরে

প্রকাশিত: ৯ অক্টোবর ২০১৯  

নুসরাত জাহান সুপ্তি (যুগের চিন্তা ২৪) : জেলায় ময়নাতদন্তের জন্য রয়েছে একটিমাত্র লাশকাটা ঘর (মর্গ)। ৬ বছর পূর্বে ১০০ শয্যা হাসপাতালে মর্গের কার্যক্রম শুরু হয়। মর্গটি তৈরী হলেও ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থাপনায় মর্গের কার্যক্রম চলছে। গণপূর্ত বিভাগে চিঠি দিয়েও কোন সুরাহা হয়নি অভিযোগ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।


নারায়ণগঞ্জ ১০০ শয্যা হাসপাতাল মর্গের দুইটি কক্ষে লাশ রাখার জন্য নেই পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। লাশ রাখার জন্য কোন মরচুয়ারি কুলার(মৃতদেহ সংরক্ষণের ফ্রিজ) নেই। কিংবা মৃতদেহকে রাখার জন্য নেই কোন কফিন (কাঠের বাক্স)। অতিরিক্ত লাশ হলে মর্গে লাশ এনে ময়লা ও অপরিচ্ছন্ন স্থানে ফেলে রাখা হচ্ছে। অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে চলে লাশের ময়নাতদন্ত।


মর্গের চারটি এসির একটি প্রায় নষ্ট। মর্গের ভিতর বেশিরভাগ জানালা ভেঙে গেছে। ফলে বাকি তিনটি এসি চললেও মর্গ শীতাতপ নিয়ন্ত্রণে থাকে না। লাশ মর্গে আনার পরে দ্রুত পঁচন ধরে।


সরজমিনে দেখা যায় , মর্গের  এসি ৪ টি থাকলেও এসির কার্যকারিতা কম। মরচুয়ারি কুলার না থাকায় লাশে পচন ধরছে দ্রুত। হাসপাতালের মর্গে ৫টি লাশ। দুটো উপরে বাকি ৩টি মেঝেতে পড়ে আছে। ডাক্তার আসতে  দেরি হওয়ায় অধিক লাশ মর্গে পড়ে আছে। জানালার গ্লাস সব বাতাসে ভেঙ্গে গেছে। অন্যদিকে এসির কার্যকারিতা পর্যাপ্ত না হওয়ায় লাশগুলোর পঁচন ধরে গেছে। 


ময়নাতদন্তের পরে লাশের সাথের স্বজনরা একদিকে আপনজনের লাশ পাওয়ার অপেক্ষা করে অন্য দিকে ফ্রিজের অভাবে লাশ পঁচতে শুরু করে। পঁচা দূর্গন্ধ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। একারণেই লাশের স্বজনরা অনেক সময় লাশের ময়নাতদন্ত করতে দিতে সম্মতি দিতে চান নাহ।  


জানা গেছে, ২০১৩ সালের ১৬ জানুয়ারি প্রয়াত সংসদ সদস্য নাসিম ওসমান শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আধুনিক মর্গ হাউজটি উদ্বোধন করেন। কিন্তু এর পরবর্তীতে মর্গের ব্যবস্থায় কোন উন্নতি করা হয়নি। কোনরকম ভাবে চলছে মর্গের কার্যক্রম।  


মর্গের তত্তাবধায়ককারী দরবন বলেন, মর্গের লাশের সংখ্যা বেশি হলে লাশ নিচে রাখা লাগে। আর বৃষ্টিতে মর্গের সামনে রাস্তায় পানি জমে থাকে। আর পানি দিয়ে মর্গে আসা হয় এজন্য মর্গ অপরিচ্ছন্ন হয়ে যায়। আবার জানালার গ্লাস ভাঙা দেখে সেখান দিয়েও পানি ভিতরে আসে।


মর্গে একটি লাশের সামনে দাড়িয়ে আছেন লাশটির স্বজন সোহাগ। তিনি বলেন, আমার বোনের লাশ গতকাল রাতে নিয়ে আসছে। আজকে দুপুর বেলাও ওর লাশটা পড়ে আছে। ডাক্তার আসে নাই, কাজও হয় নাই। আরো লাশ ছিল মর্গে। জায়গা নাই দেইখা লাশ নিচেই ফালায় রাখছে। গন্ধ বের হয়ে গেছে আমার বইনের লাশের থেকে।  


হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা.মো.আসাদুজ্জামান বলেন, আমরা মর্গের সমস্যার জন্য গণপূর্ত বিভাগকে চিঠি পাঠিয়েছি। কিন্তু সেখান থেকে এখন পর্যন্ত কোন ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।


এসিগুলোতে কিছুটা সমস্যা আছে কিন্তু আগে পুরো ৪টা এসি নষ্ট ছিল। এগুলো মেরামত করা হয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য যেসব সমস্যা রয়েছে সেই বিষয়ে গণপূর্ত বিভাগকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। এগুলো এই অর্থবছরে পেয়ে যাবো আশা করি।

 

গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ জাকির হোসেন এই বিষয়ে বলেন, আমরা এই বছরে মর্গের এসিগুলো ঠিক করেছি। এগুলো ঠিক করার পরে আর কোন লিখিত বা কোন প্রকার অভিযোগ হাসপাতাল থেকে করেনি। মর্গে আবার যেকোন সমস্যা হলে ঠিক করা হবে। কিন্তু গত বছরে মর্গের মরচুয়ারি কুলারের জন্য ৪৮ লক্ষ টাকার একটি প্রস্তাবনা মন্ত্রাণালয়ে পাঠিয়েছি। কিন্তু এটা এখন পর্যন্ত অনুমোদন পায় নাই।
 

এই বিভাগের আরো খবর