শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৭ ১৪৩১

কর্মস্থলে নারীর কাজের পরিবেশ

প্রকাশিত: ২৪ মার্চ ২০১৯  

সামাজিক উন্নয়নের জন্য পুরুষের পাশাপাশি নারীর ভূমিকা অপরিসীম। সমাজের অগ্রগতির জন্য মেয়েদেরকে সামনের সারিতে নিয়ে আসতে হবে । পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার অর্ধেকই নারী কিন্তু এ নারী সমাজ তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। কোন একটি নারী সম্মেলনে নরওয়ে প্রেসিডেন্ট গ্রে হালেম বলেছিলেন, “পৃথিবীর এমন একটি দেশ নেই যেখানে নারীরা পুরুষদের সমান অধিকার ভোগ করছে।

 

শিক্ষা দীক্ষা, কর্মসংস্থান, চাকরীর বেতন ভাতা, কাজের পরিবেশ ইত্যাদি ক্ষেত্রে নারীরা অসমতার শিকার। পৃথিবীর প্রতিটি সমাজে নারীরা হচ্ছে নির্যাতিত, নিপীড়িত। নারীর মুক্তি অর্থ সমাজের মুক্তি। সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাবার অন্যতম মাপকাঠি হচ্ছে নারী সমাজের উন্নতি। 

 

ধর্মীয় কুসংস্কার, সামাজিক রাধা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রজনন প্রভৃতি ক্ষেত্রে নারীরা প্রতিবন্ধকতা জাতীয় অগ্রগতি কে বিলাম্বিত করছে। নারীর মজুরীবিহীন কাজের স্বীকৃতি পরিবেশ সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় নারীর ভূমিকা, নারীর অধিকারকে মানবাধিকাররূপে ঘোষণা, উন্নয়নের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে নারীর ক্ষমতায়ণ, স্বীকৃতি নারী-পুরুষের সমতা নিশ্চতকরণই পারে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে। নারী-পুরুষের সমতা নিশ্চিতকরণ হলে বিশ^ নেতৃত্বে নারীদের ভূমিকা শক্তিশালী হবে। 


দুঃখজনক হলেও এটি সত্যি আমাদের সমাজে নারীরা ঘর থেকে শুরু করে চাকুরীর ক্ষেত্রেও বিরূপ পরিবেশের শিকার হয়। কর্মস্থলে অধীনস্থ হয়ে কাজ করার কারণে লালসার শিকার হতে হয় নানাভাবে। সেক্ষেত্রে কাজের চাপ বাড়িয়ে দেয়া বা সুযোগ বুঝে কাম-চরিতার্থ করার কাজে ব্যস্ত থাকে। অন্যথায় চাকুরী চলে যাওয়ার উপক্রম হয়। মুখ বন্ধ করে শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার সহ্য করে জীবিকার প্রয়োজনে চাকুরী করতে বাধ্য হয়। 


তবে কখনো কখনো নারীরাও আর্থিক সুবিধা নেওয়ার জন্য বাধ্য হয় বা অভ্যস্ত হয়ে পরে। রক্ষকই তখন ভক্ষক হয়। কখনো কখনো একটি সংঘবদ্ধ দল যোগাযোগের মাধ্যমে মেয়েটির অসহায়ত্বের সুযোগ নেয়। আবার কখনো নারী শ্রমিকদের বেলায় দেখা যায় বেতন বৈষম্য। পুরুষ ও নারীর বেতন, সুযোগ সুবিধার বৈষম্য। সেক্ষেত্রে নারীর প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে আরও গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। নারী-পুরুষের সম্মিলিত অঙ্গীকারই গড়ে তুলতে পারে সমতার বিশ্ব, ভারসাম্যের বিশ্ব। 


বাংলাদেশের টেক্সটাইল শিল্পের উন্নয়ন এবং নারীর ক্ষমতায়নের প্রায় ৯৫ কোটি ৬ লাখ ৬৮ হাজার ২২৪ টাকা (৭ কোটি ৫ মিলিয়ন ক্রোনার) আর্থিক সহায়তার ঘোষনা দিয়েছে ডেনমার্ক দেশটির উনয়ন্নমন্ত্রী “উলা টরনার্স” গত ২২ নভেম্বর এই ঘোষণা দেন। 


তিনি আরও বলেন, এই খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ৪ মিলিয়ন নারীর কাজের পরিবেশ উন্নয়নে এই সহায়তা কাজ করবে। তিনি বলেন, লিঙ্গ বৈষম্য দূর করতে নারীর ক্ষমতায়ন জরুরী। নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে হলে উপযুক্ত কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। 


রাজনৈতিক ক্ষমতায়ণে নারীর অংশগ্রহণের মান হিসেবে বিশে^র মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ষষ্ঠ। জাতীয়-নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১, পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন ২০১০, ডি.এন.এ আইন ২০১৪, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে জাতীয় পরিকল্পনা ২০১৩-২০২৫ প্রনয়ন। পোশাক শিল্পে প্রথমবারের মতো ওয়েজবোর্ড গঠন ইত্যাদি উদ্যোগ ফলপ্রসূ হয়েছে। 

 

নারীর অগ্রযাত্রাকে আরও বেগবান করতে হলে নারীর অনানুষ্ঠানিক কাজের অর্থনৈতিক মূল্যায়ণ, কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গ সংবেদনশীল পরিবেশ, নারীবান্ধব আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন, কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি ও বৈষম্য দূরীকরণ এর বিষয়ে বিশেষ নজর দিতে হবে। 


সমাজ সভ্যতা অগ্রযাত্রায় নারীর ভূমিকা আসলে সমান্তরাল। আমাদের দেশে প্রায় ১৬ হাজার ৭০০ নারী ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তা। আমাদের অর্থনীতির অন্যতম প্রাণশক্তি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের ৮০ শতাংশের বেশি নারী। আমাদের দেশে বর্তমানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে জেন্ডার সংবেদনশীল বাজেট প্রণয়ন একটি বড় অগ্রগতি। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় চারটি বিষয় অন্তভুক্ত ও ইতিবাচক। গত এক দশদেকর নিরন্তর প্রচেষ্টায় বর্তমান দেশের নারী শিক্ষা হার যেমন বেড়েছে, তেমনি নারী উন্নয়নের সার্বিক সূচকে বিশে^ বাংলাদেশ ৬৪ তম অবস্থানে থাকলে এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলভুক্ত ২৪টি দেশের অষ্ট্রেলিয়ার পরেই দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে।

 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশে নারীর তাৎপর্যপূর্ণ উন্নয়ন হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৫ কোটি ৪১ লক্ষ কর্মজীবি মানুষের মধ্যে ১ কোটি ৬২ লক্ষ নারী। তাই চাকুরী করার সুন্দর পরিবেশের নিশ্চয়তা দিতে পারে সুন্দর মানসিকতা বা দৃষ্টিভঙ্গি। নারীকে ভোগের পণ্যে পরিণত করার চিন্তা মগজ থেকে বাদ দিতে হবে, অসহায়ত্বের সুযোগ নেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। 


পক্ষান্তরে নারীকেও অবস্থান ক্যারিয়ার ও অনৈতিক আর্থিক সুবিধা লাভের চিন্তা থেকে দূরে সরে আসতে হবে। তবেই নারীর মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে। বেতন বৈষম্য দূর করতে হবে। সমতা প্রতিষ্ঠিত হবে। 

 

কর্মস্থলে নারীর সুন্দর পরিবেশই দিতে পারে নারী আর্থিক সচ্ছলতা, যোগ্যতার সম্মান, সঠিক মূল্যবোধের দৃষ্টিভঙ্গি, নারী-পুরুষের অবস্থানগত বৈষম্য দূরীকরণের নিশ্চয়তা আর নারীকে মানুষ হিসেবে বিবেচনা করার সুযোগ। 

 

লিজা কামরুনাহার

এই বিভাগের আরো খবর