বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১১ ১৪৩১

এক সিগন্যালেই এক ঘন্টা !

প্রকাশিত: ৮ অক্টোবর ২০১৯  

বিশেষ প্রতিনিধি (যুগে চিন্তা ২৪) : এক সিগন্যালেই পার হয় এক ঘন্টা সময়। প্রতিদিন ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ১৬ জোড়া (৩ জোড়া ডেমু ট্রেনসহ) ট্রেন চলাচল করে। ট্রেন চলাচলের দরুণ নারায়ণগঞ্জের একটি বিশাল অংশ উপকৃত হচ্ছে ঠিকই কিন্তু মূল্যবান কর্ম ঘন্টারও মচ্ছব হচ্ছে বলে মনে করেন বোদ্ধামহল। তাদের মতে, প্রতিদিন ১৬ জোড়া ট্রেন চলাচল করে শহরের উপর দিয়ে।

 

শহরের প্রাণকেন্দ্র চাষাড়া, গলাচিপাসহ  ১ ও ২ নং রেলগেট ক্রসকরে ট্রেন ঢুকছে রেলস্টেশনে। প্রতিবার ট্রেন আসলে রেলগেটে সিগন্যাল পড়ে। সিগন্যাল কার্যকর হয় ট্রেন আসার অন্তত ৫ মিনিট আগে। ট্রেনের সিগন্যাল পড়লেই গেটের দু’পাশে বিভিন্ন যানবাহনের জটলা তৈরি হয়।  

 

ট্রেন আসা পর্যন্ত ৫/৬ মিনিটে গেটের দুপাশেই যানবাহনের জটলা রূপ নেয় ঘন যানজটে। ট্রেন চলে গেলে সিগন্যাল উঠে যায়। কিন্তু যানজট সারেনা। গেটের দু’পাশের যানজট সেরে যান চলাচল স্বাভাবিক হতে কমপক্ষে ৪০/৪৫ মিনিট সময় লাগে। কখনো কখনো ঘন্টা পেরিয়ে যায়। নারায়ণগঞ্জ রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার মো.গোলাম মোস্তফা জানান, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ১৬ জোড়া ট্রেন চলাচল করে। সকালের দিকের ট্রেনগুলো চলে এক ঘন্টা পরপর। দুপুরের দিককার ট্রেন চলে দেড় ঘন্টা পরপর আবার বিকেল থেকে রাতের ট্রেন চলে এক ঘন্টা পরপর।


একাধিক সূত্র ও শহরের ১নং ও ২নং রেলগেট এলাকার আশপাশের ব্যবসায়ী সমাজের অনেকে বলেন, ট্রেন নারায়ণগঞ্জবাসীর উপকার করছে। প্রতি ঘন্টায় ট্রেন চলে। দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির যাতায়াতে সুবিধে হচ্ছে। কিন্তু এটাও ভেবে দেখার সময় এসেছে মূল শহরের ভেতর দিয়ে ট্রেন চলাচলে নাগরিক জীবনে ভোগান্তি বাড়ছে। নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান কর্ম ঘন্টা। একবারের সিগন্যালেই ঘন্টা খানেক সময় পেরিয়ে যায় যানজটে। 


১৬ জোড়া ট্রেন যাওয়া-আসা মিলিয়ে সিগন্যাল পড়ে ৩২ বার। প্রতিবারে ৩০ মিনিট করে যানজটের সময় ধরলেও প্রতিদিন ১৬ ঘন্টা সময় নষ্ট হচ্ছে রেলগেটের সিগন্যালের যানজটে। মূল শহরে রেলস্টেশনের যন্ত্রণা সরিয়ে নেয়ার সময় এসেছে। এটা ব্রিটিশ আমল নয়। এটা ডিজিটাল যুগ। সবকিছুই বদলে গেছে। সময় এসেছে মেট্রো ট্রেনের। সেখানে কিনা আমরা সাবেকি আমলের রেলগেটের সিগন্যালেই প্রতিদিন ১৬ ঘন্টা মূল্যবান সময় নষ্ট করছি। আমাদের এই যন্ত্রণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

 

জানাগেছে, নারায়ণগঞ্জ রেলস্টেশন থেকে ঢাকা কমলাপুর রেলস্টেশনের দূরত্ব মাত্র ১৮ কিলোমিটার। রেল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে ঝুঁকিপূর্ণ ও অরক্ষিত অবস্থায় চলছে নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা ট্রেন সার্ভিস। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেল লাইন ঘেঁষে গড়ে উঠেছে কাচাঁবাজার, ফলের দোকান, মার্কেটসহ অসংখ্য বস্তিঘর। নারায়ণগঞ্জ রেল স্টেশন থেকে ছেড়ে প্রতিটি ট্রেন চাষাঢ়া, ফতুল্লা, পাগলা, শ্যামপুর, গেন্ডারিয়া হয়ে কমলাপুর যায়। ঢাকা-নারায়নগঞ্জ ১৮কিলোমিটার রেল লাইনের মধ্যে কমপক্ষে ৪৫টি অবৈধ রেল ক্রসিং আছে যেখানে কোন ব্যারিকেড ব্যবস্থা নেই। আর ১৩টি রয়েছে বৈধ রেল গেট।

 

পর্যবেক্ষক মহলের মতে, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেললাইন স্থাপিত হয়েছিল ব্রিটিশ আমলে। তখন  নদীবন্দরের সুবিধা  দেয়ার জন্যই রেলস্টেশন ৫নং সার ঘাট এলাকায় স্থাপন করা হয়। জাহাজ থেকে পণ্য খালাস করে ট্রেনযোগে দেশের বিভিন্ন এলাকায় তা পরিবহন করা যেত। একই ভাবে ট্রেনযোগে কোন মালামাল নদীবন্দরে এনে জাহাজের মাধ্যমে তা দেশ বিদেশে পাঠানো যেত। 

 

আশি ও নব্বই দশকেও  ট্রেনের এই সুবিধাটুকু ব্যবসায়ী সমাজ উপভোগ করতো। বর্তমান যুগে  যোগাযোগ খাতে  বেড়েছে স্থল ও আকাশ পথের গুরুত্ব। ফলে বর্তমান সময়ে শহরের মাঝখান দিয়ে ট্রেন চলাচল যুক্তিযুক্ত নয়। রেলস্টেশন এখন শহরের বাইরে নেয়া সময়ের দাবি। নইলে দিনে দিনে সমস্যা আরো বাড়বে। মাঝে মধ্যে বাস-ট্রেনের সংঘর্ষের দূর্ঘটনার সংবাদ সে কথাই মনে করিয়ে দেয়।

এই বিভাগের আরো খবর