বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

আমার নেতা জহাঙ্গীর ভাই

প্রকাশিত: ১০ জুন ২০১৯  

বিএনপিতে আমার দুই যুগের রাজনৈতিক জীবনের অভিবাবক ও শিক্ষকের নাম মরহুম আলহাজ্ব জহাঙ্গীর আলম। আজ ১০ জুন তাঁর ১ম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১৮ সালের এই দিনে আমি নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে বন্দী অবস্থায় সংবাদ পাই জহাঙ্গীর ভাই ইন্তেকাল করেছেনে। গত এক যুগে যার সর্বকাজে সঙ্গী ছিলাম, তার শেষ বিদায়ে উপস্থিত হতে না পারার কষ্ট এখনো আমাকে পীড়িত করে। জহাঙ্গীর ভাইয়ের মৃত্যুর প্রায় এক মাস পরে কারামুক্ত হয়ে তার কবর জেয়ারত ও তার বাসায় গিয়ে পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করি।

 

জহাঙ্গীর আলম ভাই নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের আহবায়ক থাকাকালীন সময়ে আমাকে যুবদলের একজন কর্মী হিসাবে কাজ করার আনুষ্ঠিানিক সুযোগ করে দেন। তখন থেকে ভাইয়ের সাথে ছায়া সঙ্গী হয়ে পথ চলা শুরু। পর্যায়ক্রমে তার সাথে সখ্যতা ও গুরু শিষ্যের সর্ম্পক। তথাকথিত ১/১১ এর বৈরী রাজনৈতিক সময়ে জহাঙ্গীর ভাইকে সভাপতি ও আমাকে সাধারণ সম্পাদক করে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের প্রথম পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় যুবদল।

 

জহাঙ্গীর ভাই ছিলেন কর্মী বান্ধব ও সংগঠন প্রিয় নেতা। আমার প্রতি তার অগাধ বিশ্বাস,ভালবাসা ও প্রেরণায় নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলকে সারাদেশের মধ্যে আলোচিত অঙ্গ সংগঠনে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছিলাম। যার ধারাবাহিকতায় পরবর্তী সময়ে আমি নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের আহবায়ক ও সদ্য সভাপতি নির্বাচিত হতে পেরেছি। জহাঙ্গীর ভাই নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সভাপতি থাকাকালীনই ২০১০ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জ শহর বিএনপির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন।

 

জহাঙ্গীর ভাইকে দূর থেকে অনেক রাগী ও মেজাজী মানুষ মনে হলেও তিনি ছিলেন কোমল হৃদয়ের অধিকারী। তিনি ছিলেন কর্মী বান্ধব ও সংগঠন প্রিয় মানুষ। তিনি ব্যাক্তিগত জীবনে দামী পোষাক ও খাবারের প্রতি দূর্বল ছিলেন। জহাঙ্গীর ভাইয়ের সাথে আমি ঢাকার অনেক নামী দামী হোটেলে ও অনেক জায়গায় ঘুরেছি। ঢাকা শহরে তার অনেক নামী দামী বন্ধু বান্ধব দেখেছি।

 

তাঁর সবচেয়ে ভাল যে গুনটি আমাকে বেশী মোহিত করেছে তা তার সময়ানুবর্তিতা। তিনি যেকোন কর্মসূচীর ঘোষিত সময়ের আধা ঘন্টা পূর্বে চলে আসতেন। কোনদিন কোথাও ৫মিনিট দেরী করতে দেখি নাই। রাজনৈতিক জীবনের বাইরেও তিনি নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার সাবেক কমিশনার ও বাংলাদেশের গুরুপূর্ণ ব্যবসায়ী সংগঠন বাংলাদেশ ইয়ার্ন মার্চেন্ট এশোসিয়েসনের কয়েকবারের নির্বাচিত সভাপতি ছিলেন।

 

আমি অনেক সময় ব্যয়বহুল ও ঝুঁকিপূর্ণ কর্মসূচী গ্রহণ করলে অনেক সিনিয়র নেতারাই দ্বিমত পোষণ করলেও জহাঙ্গীর ভাই কোনদিন না করতেন না। তিনি জানে মালে সংগঠনের জন্য কাজ করেছেন। শুধু যুবদল বা বিএনপিই নয়, প্রত্যেকটি অঙ্গ সংগঠনের জন্যই তিনি ছিলেন অভিবাবক। বিশেষ করে শ্রমিকদল ও মহিলাদলের সকল কর্মকা- ছিল তাকে ঘিরেই। তার আরেকটি বিষয় আমাকে শিক্ষা দিয়েছে যাকে মানবে তাকে সব দিয়ে মানতে হবে। তিনি তৈমূর ভাইয়ের প্রতি কতটুকু অনুগত ছিলেন তা লিখে বুঝানো স¤ভব নয়।

       

১৫ অক্টোবর, ২০১৫ তারিখে ১৩টি মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে ২০১৫ ভাই ও আমিসহ ১২ জন নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের নেতাকর্মী নিন্ম আদালতে আত্মসমর্পণ করে কারাগারে যাই। কারাগারে প্রায় তিন মাস আমরা একসাথে ছিলাম। কারাগারে থাকাকালীন সময়ে তিনি ডায়বেটিকস, কিডনি, হার্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে খুবই অসুস্থ হয়ে পরেন। তখন তাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের মাধ্যমে ঢাকা মেডিক্যালে চিকিৎসা নিতে হয়েছিলো। এরপর আর তিনি পুরোপুরি সুস্থ হন না।

 

নারায়ণগঞ্জে বিএনপির রাজনীতিতে একমাত্র অঙ্গ সংগঠন নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদল যার প্রত্যেকটি ওর্য়াড-ইউনিয়নের কমিটি সম্মেলন বা কর্মী সভার মাধ্যমে গঠন করেছিলেন ২০১৫ভাই। যার ধারাবাহিকতা এখনো চালু রাখতে পেরেছি তার শিষ্য হিসাবে।

 

সরকারের রোষানলে পরে বারবার কারাবরণ ও নিজ দলের কিছু সুবিধাবাদী তথাকথিত ক্লিনম্যান খ্যাত সংস্কারবাদীদের সাংগঠানিক ষড়যন্ত্রের ফলে মন পীড়াই তার অসুস্থ্যতা ও অসময়ে চলে যাওয়ার প্রধান কারণ। এর আগেও সুবিধাবাদী তথাকথিত ক্লিনম্যান খ্যাত সংস্কারবাদীদের সাংগঠানিক ষড়যন্ত্রেরও শিকার হয়েছিলেন রফিকুল ইসলাম কমিশনার। বিএনপির রাজনীতি করার কারণে তাকে প্রশাসন নানাভাবে অপদস্থ করেও দল বিমুখ করতে পারেনি। বিনা কারণে তার বসতবাড়ি কয়েকদফা ভাংচুর করেও তাকে ক্ষতিগ্রস্থ করা হয়েছে। পেশী শক্তির মাধ্যমে তাকে বাংলাদেশ ইয়ার্ন মার্চেন্ট এশোসিয়েসন থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছিলো।

 

ভাই সরকারের রোষানলে ও নিজ দলের কিছু সুবিধাবাদী তথাকথিত ক্লিনম্যান খ্যাত সংস্কারবাদীদের সাংগঠানিক ষড়যন্ত্র কষ্ট বুকে নিয়ে চলে গেছেন অসময়ে। তার এই চলে যাওয়া নারায়ণগঞ্জে বিএনপির রাজনীতিতে কোনদিন পূরণ হবে না। নারায়ণগঞ্জে বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা, বিশেষ করে আমি হারিয়েছি আমার প্রিয় অভিবাবক। যার আশ্রয় প্রশ্রয়ে আমার এতদূর পথ চলা। যতদিন বেঁচে থাকি, যতদিন রাজনীতিতে সক্রিয় থাকি, ততদিন জহাঙ্গীর ভাইয়ের স্মৃতি বুকে নিয়ে কর্মী বান্ধব রাজনীতি করবো ইনশাল্লাহ।

 

মহান রাব্বুল আলামীনের দরবারে কামনা করি আল্লাহ যেন তাকে ক্ষমা করে দিয়ে জান্নাত দান করেন।

 

মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ

লেখক : সভাপতি- নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদল ও ১৩নং ওর্য়াড কাউন্সিলর, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন।

মোবাইল : ০১৭১৭-১৭৮২৪২

এই বিভাগের আরো খবর