শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৫ ১৪৩১

আজ ভালবাসার দিন

প্রকাশিত: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০  

যুগের চিন্তা ২৪: ‘ভালবাসা’ মাত্র চার অক্ষরের একটি শব্দ। পৃথিবীতে ভাষা সৃষ্টির পর এ শব্দটি কত কোটি কোটি বার কত নরনারীর কন্ঠে উচ্চারিত হয়েছে তার কোন লেখাজোখা নেই। তারপরেও বহু ব্যবহারে এ শব্দ জীর্ণ হয়ে পড়েনি। 


প্রতি প্রজন্মের কাছে এ শব্দটি নতুন হয়ে আসে। যথা স্থানে যথা সময়ে এ শব্দের প্রয়োগে এখনো তরুন তরুনীর কন্ঠ বুজে আসে, দু’ঠ্যাংয়ে কাঁপুনি ধরে। তবে, ভালবাসার অনুভব, অনুভূতি ও এর প্রকাশ কিন্তু চিরন্তন। ভাষা সৃষ্টির বহু পূর্ব থেকেই প্রাণীজগতে ভালবাসা ছিল বলেই পৃথিবীর সকল ভাষার অভিধানে অতি প্রয়োজনীয় হিসেবে এ শব্দটি ঢুকে পড়েছে।


মায়ের ভালবাসা দিয়েই তো আমাদের পৃথিবীর শুরু। মানুষের সবচেয়ে দুর্বলতম স্থান তার মা। সবচেয়ে ভরসার স্থলও। মায়ের কাছে মার খেয়ে শিশু নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য তার মায়ের কোলেই ঝাঁপিয়ে পড়ছে, এ চিত্র চিরন্তন। পিতামাতা, ভাইবোন, আত্মীয় স্বজন সকলকে নিয়ে এক ভালবাসার জগতেই আমাদের বসবাস। 


তবে, প্রাণী জগতের সকল শিশুই ভালবাসা শেখে মায়ের কাছ থেকে। বয়োবৃদ্ধির সঙ্গে তার এ ভালবাসা সর্বভূতে জড়িয়ে ফেলে। বলা হয়, ভালবাসার প্রকাশ ভাষাতীত। ভাষা না জেনেও ভালবাসা যায় এবং এ পৃথিবীতে ভাষা সৃষ্টির আগেও  ভালবাসা ছিল। 

এ কারণে পশু, শিশু এবং পাগলও ভালবাসা বুঝে। মানুষের ভালবাসা এখন নাচ, গান, গল্প, ছবি, ভ্রমণ, খেলাধুলা, সাগর, পাহাড়, মরু, জঙ্গল তথা সর্বভূতে ছড়িয়ে পড়েছে।


তবে, তারুন্যের প্রেম বা ভালবাসাই পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশী প্রচার ও পূজো পেয়ে চিন্ময় হয়ে আছে। রোমিও-জুলিয়েট, লাইলী-মজনু ও শিরি-ফরহাদের ভালবাসার কথা পৃথিবীর স্থান ও কালকে জয় করে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। 


দুনিয়ার অধিকাংশ ভাষায় অনুদিত হয়েছে এদের প্রেমোপাখ্যান। এদেশে চন্ডিদাস-রজকিনী এবং দেবদাস-পার্বতীর ভালবাসার কাহিনীও কিংবদন্তী হয়ে আছে। কৃষককন্যার ভালবাসার জন্য ইংল্যান্ডের রাজা অষ্টম এডোয়ার্ডের সিংহাসন ত্যাগের কাহিনী দুনিয়াতে রূপকথা হয়ে আছে। জাতি হিসেবে আমরা বাঙ্গালীরা ভালবাসার গল্প ভীষণ ভালবাসি। 


তবে, প্রেম বা ভালবাসার পরিণতি হিসেবে মিলনের চেয়ে বিরহই আমাদের বেশী স্পন্দিত করেছে। এ দেশের মরমিয়া কবির কন্ঠে বিরহের সুরই চির মৃন্ময় আছে।


ঋালবাসা বহতা নদীর মতোই সৃষ্টির শুরু থেকে আমাদের সঞ্জীবিত করেছে, সংগ্রামে অনুপ্রেরণা দিয়েছে এবং বেঁচে থাকার সাহস যুগিয়েছে। তবে, সময়ের সঙ্গে এ দেশে ভালবাসার বাহ্যিক বা পোষাকি রূপেরও নানা পরিবর্তন ও বিবর্তন ঘটেছে। এক সময় প্রেমিক প্রেমিকার ভালবাসার মূল বাহন ছিল প্রেমপত্র। সে সময় মুখে ভালবাসার প্রকাশও ছিল বিড়ম্বনাকর। 


ভালবাসা শব্দটির প্রথম উচ্চারণে বীরপুরুষের মুখেও কথা জড়িয়ে যেত, ঘেমে উঠতো হাতের তালু। প্রথম প্রেমপত্রটি লিখতে লিখতে রাত ভোর হয়ে যেত, ঘরময় জমে উঠতো ছেড়াপাতার আবর্জনা, তারপরও সে পত্রের মুসাবিদা মনোপুতঃ হয়নি। প্রযুক্তি আজকের প্রেমিক প্রেমিকাদের এসব বিড়ম্বনার হাত থেকে নিষ্কৃতি দিয়েছে। 


এখন একজন আরেক জনের মুখোমুখি না হয়েই তাকে ‘হাই’ ‘হ্যালো’ বলতে পারে এবং লাইক-ডিজলাইকও দেয়া যায়। আগে তরুন তরুনীর প্রেম ভালবাসার ব্যপারটি অনেক বেশী গোপনীয় ছিল। তখন ভালবাসার বীজ বপনে একজন অন্ততঃ মাধ্যম থাকতো। এখন ফেসবুক, টুইটার, মেসেঞ্জার ইত্যাদি এসে মাধ্যমের ভূমিকা পালন করছে। আগে প্রেমিক প্রেমিকার কোন জার্সি ছিল না।


এখন প্রেমিকের গায়ে গরদের পাঞ্জাবী, হাতে ফুলের কলি, প্রেমিকার মাথায় ফুলের মুকুট এবং গলায় ও হাতে ফুলের মালার একটি সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। ভালবাসার জন্য এখন বছরের একটি দিনও নির্দিষ্ট করা হয়েছে। এ দিনটি এখন মানুষ ঘটা করে পালনও করে। যেমন, ভালবাসো আর না বাস, আজ ভালবাসার দিন, পহেলা ফাল্গুন, ঋতূরাজ বসন্তের প্রথম দিন। 
 

এই বিভাগের আরো খবর